শিরোনাম
সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

শেষ বাজেট কিনা সিদ্ধান্ত জনগণের

সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫% প্রণোদনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেষ বাজেট কিনা সিদ্ধান্ত জনগণের

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা  দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনার সময় তিনি এ বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অর্থমন্ত্রী বিষয়টি গ্রহণ করবেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। আজ সোমবার জাতীয় সংসদে পাস হবে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী যারা আছেন, তাদের বিশেষ  বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ এই আপৎকালীন সময়ে প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী আশা করি এ বিষয়টি গ্রহণ করবেন। আমরা ৫ শতাংশ মূল বেতন বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে তাদের দেব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট সাময়িক সংকট নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সাহস নিয়ে তা মোকাবিলা করতে হয়। আমরা পরনির্ভরশীল নই, কারও কাছে ভিক্ষা চেয়ে নয়-আমরা আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের বুকে এগিয়ে যেতে চাই। শত বাধা, সমালোচনা, সংকট পেরিয়ে বাংলাদেশকে আমরা সবদিক থেকে উন্নত করেছি। তিনি বলেন, আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বাস্তবায়ন আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া আর কে করতে পারবে? একটা মানুষ বা নেতার নাম দেখান সে পারবে? উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদেরই দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের ঘটনা যদি না ঘটত তবে বাংলাদেশ আরও উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হতো। দেশবাসী আমাদের ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ দিয়েছে বলেই আমরা টানা তিন মেয়াদে ১৫টি বাজেট দিতে পেরেছি। এটাই বর্তমান মেয়াদের শেষ বাজেট। এ বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের প্রথমে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটাই আমাদের শেষ বাজেট কি না, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার আমি দেশের জনগণের ওপরই ন্যস্ত করলাম।

এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের দীর্ঘ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। এই দেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব এটাই মূল লক্ষ্য। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করেই চলব ইনশাআল্লাহ। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট আধুনিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। তিনি বলেন, বাজেটে অনেক করারোপ করা হয়েছে, কমানো হয়েছে। তবে দেশের মানুষের জন্য যদি বাজেটে কোথাও হ্রাস করতে হয় তা করব। কর বাড়াতে হলে আইন লাগে, কিন্তু কমাতে গেলে আইন লাগে না। সেটি আমরা এসআরওর মাধ্যমে করে দেব। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই বাজেট প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের কারণে বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে, পরিবহন ও সঞ্চালন ব্যয়ও বেড়েছে অনেক। সেই আঘাত বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যখন উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে, তখন আমরা একটা বাজেট দিতে পেরেছি সেটাই বড় কথা। তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। আলোচনা বা সমালোচনা যেটাই করুক না কেন, বাজেট নিয়ে তারা যে চিন্তাভাবনা করছেন সে জন্য তাদের আমি সাধুবাদ জানাই। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আমরা সব ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম। ওই কঠিন সময়ে আমরা স্বাস্থ্য খাতের দিকে বিশেষ নজর দিই। বিপুল অর্থ ব্যয় করে করোনা ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী পণ্য এনে আমরা দেশের জনগণের প্রাণরক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। সেক্ষেত্রে আমরা সফলও হয়েছি। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সারা বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছে। গত সাড়ে ১৪ বছরে সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে আমরা ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ৬০তম অর্থনীতির দেশ। গত ১৪ বছরে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ এখন ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ২০০৬ সালে দেশের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশ। আমরা তা ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু বৈশ্বিক সংকটের কারণে এখন তা কিছুটা বেড়েছে। বেশি দামে পণ্য কিনে কম মূল্যে দিতে হচ্ছে, এ জন্য রিজার্ভেও কিছুটা টান পড়েছে। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, জনগণের কল্যাণ করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। দেশের কোনো মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে সেদিক লক্ষ্য রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী বছরেও কৃচ্ছ্রসাধন করার নীতি অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সে জন্য ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে কম মূল্যে খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এতে ৫ কোটির মানুষ উপকৃত হচ্ছে। এই ঈদুল আজহাতেও ১ কোটি পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হবে। দেশের ১ ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সে জন্য দেশবাসীকে তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তাঁর আহ্বানে দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে। আমিও কাজ করে যাচ্ছি, গণভবনকে খামারবাড়িতে পরিণত করেছি। সংসদ নেতা ছাড়াও বাজেট সমাপনী আলোচনায় বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, পররাষ্ট্্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

সর্বশেষ খবর