সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

মডেল নির্বাচন ছিল না ১৪-১৮ সালে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মডেল নির্বাচন ছিল না ১৪-১৮ সালে

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন কোনো মডেল নির্বাচন ছিল না। ওই নির্বাচন নিয়ে আমাদেরও খেদ আছে। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বা কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপকে আমরা কখনোই স্বাগত জানাব না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কে এলো বা এলো না, সেটা বিবেচ্য নয়। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে  প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা রাখতে চায় না, তারা অসহযোগিতা করবে। কেননা আমাদের দেশে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার নজির আছে।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছি না। তবে আমাদের থমকে যাওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।

চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করে কথা বলছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন কেন, যে কোনো বিষয়ে আমাদের কাঠামো, সংবিধান, আমাদের নির্বাচন কমিশন বা সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কমেন্টস করতে পৃথিবীর কোনো বন্ধুরাষ্ট্রকেই আমরা বলিনি বা স্বাগত জানাব না। আমরা কখনোই এ ব্যাপারে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে উৎসাহ দেব না। তিনি বলেন, যে কয়েকজন করেন, আমরা অতীতেও বলেছি আমাদের অবস্থান। তারপরও যারা এটা করেন বা করে যান, আমরা কখনোই এটাকে স্বাগত জানাব না। তবে কেউ যদি পর্যবেক্ষক পাঠাতে চান, পাঠাতে পারেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনের পর একটি দেশ ছয় মাসের মধ্যে আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিল। তখন এটিকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে অভিহিত করেছিল সরকার। ওই সময়েও সরকার চাপে ছিল না এবং বর্তমানেও নেই। বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে অবশ্যই ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রশ্ন এলে আওয়ামী লীগ সরকারকে, নেতৃত্বকে বা প্রধানমন্ত্রীকে আমরা সঠিকভাবে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখছি না, বা অনেক ছাড় দিচ্ছি। এ ধরনের নানান দোষে সাব্যস্ত করা হয় বা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বিষয়, যা আমাদের বিপক্ষে কাজ করেছে, সেটি হচ্ছে, আমরা ভারতকে গ্যাস দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছি মার্কিন চাপের মুখে। কই তখন তো কেউ বলেন না শেখ হাসিনা কেন ভারতকে গ্যাস দিল না। প্রতিমন্ত্রী জানান, একটি দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা বা ভিসানীতি দেয়নি। একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে ওই রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব। আমরা আশা করি এখানেও আপনারা উন্নতি দেখবেন। আমরা যোগাযোগ রাখছি এবং কাজ করছি। র‌্যাব প্রশ্নে পরিষ্কারভাবে ওই দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন যে, গত দুই বছরে বেশ উন্নতি হয়েছে। তাই যদি হয় তাহলে এর ফলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়া উচিত। আমরা এটি আদায় করে ছাড়ব। কারণ আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে পেরেছি। উন্নতির পরও যদি এটি প্রত্যাহার না হয়, তাহলে একদিন আমাদের বুঝতে হবে এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণ আছে।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর ওপর দায়িত্ব বিশ্বের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার। কিন্তু তারা কোনো এক অদ্ভুত কারণে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ১০ বছর ধরে কাজ করছে। যেখানে ১৬৯ জন জীবন দিয়েছেন। এ অর্জনকে যারা খাটো করে দেখছেন, ব্যর্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তারা বাংলাদেশের বন্ধু নন, শত্রু। তারা কংগ্রেসম্যান, নাগরিক, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী যে-ই হোন, তারা শত্রু। তাদের যারা টাকা দিয়ে প্রভাবিত করেছেন, তারাও যে বাংলাদেশের শত্রু, এটা চেনার সময় এসেছে। এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কোনো কারণ নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেস সদস্যদের চিঠির দিকে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সামনের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের চিঠির সংখ্যা বাড়তে থাকবে। বিএনপির লোকজন টাকা নিয়ে চিঠির ড্রাফট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের কাছে। যারা চিঠি দিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, লবিস্ট বা পিআর ফার্মের পেছনে জনগণের করের টাকা ব্যয় করতে চান না। এখন ‘নেলসন মলিন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এ ছাড়া বিজিআর নামে পত্রিকায় আর্টিকেল লেখার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের চুক্তি নবায়ন করা হয়নি।

ব্রিকস জোটে যোগদান সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার জানামতে ব্রিকসে যোগদানের আবেদন ফরম নেই। তবে আমরা একটি চিঠি দিয়েছি। এটাকে আপনারা আবেদন বললেও বলতে পারেন। ব্রিকসে যোগদান  ব্যাকআপ প্ল্যানের কোনো অংশ নয়। আমরা মনে করি, এ ধরনের শক্তিশালী  জোটে যোগ দিলে আমাদের লক্ষ্য ত্বরান্বিত হবে। আর এই জোটে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য মার্কিন ডলারকে বাইপাস করতে নয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিগত সাড়ে ৯ বছরে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছি। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় আমরা এখন একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ পেয়েছি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিকাব প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।

 

সর্বশেষ খবর