মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

আজ পবিত্র হজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ পবিত্র হজ

মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত পবিত্র হজ আজ। সৌদি আরবের দিনপঞ্জি অনুযায়ী আজ ৯ জিলহজ মঙ্গলবার পবিত্র মক্কার অদূরে আরাফার ময়দানে সমবেত হয়েছেন সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন এবং নিজেদের পাপমোচন ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় তারা সবাই আত্মনিমগ্ন। তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক; লা শারিকা লাক’। অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই। সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ এই সেই আরাফার ময়দান যেখানে আখেরি নবী আল্লাহর প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।

পবিত্র ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ হজ। হজ মানে ৯ জিলহজ আরাফার ময়দানে মুসলিম উম্মাহর সমবেত হওয়ার দিন। ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার দিন। মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের পুণ্যস্মৃতি-বিজড়িত পবিত্রতম এ দিন। এবার হজ পালিত হচ্ছে মহামারি করোনার বিধিনিষেধহীন সেই আগের মতোই। এ বছর হজ পালনের জন্য বিশ্বের ১৬০ দেশ থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ২০ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান সৌদি আরবে সমবেত হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন পবিত্র হজ পালন করেছেন।

আরাফার ময়দানে সমবেত হাজিদের উদ্দেশে আজ খুতবা দেবেন সৌদি আরবের সিনিয়র উলামা কাউন্সিলের ইমাম শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ। তিনি রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মসজিদুল হারামের খণ্ডকালীন ইমাম। হজের খুতবা বাংলা ভাষাসহ ১৪টি ভাষায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। https://manaratalharamain.gov.sa ওয়েবসাইটে গিয়ে বাংলায় হজের খুতবা শোনা যাবে।

সৌদি পঞ্জিকা অনুযায়ী গতকাল ৮ জিলহজ সোমবার শুরু হয়েছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। হাজিরা গতকাল সারা দিন মিনায় অবস্থান করেন। এ সেই মিনার প্রান্তর যেখানে পৃথিবীর আদিপিতা হজরত আদম (আ.) ও আদিমাতা হজরত বিবি হাওয়া (আ.) আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ক্ষমার পয়গাম লাভ করেছিলেন। এ সেই প্রান্তর বেহেশত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়ার পর যেখানে আদিপিতা ও আদিমাতা একত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। সেই মিনার প্রান্তরে গতকাল সমবেত হন আদি পিতা-মাতার উত্তরসূরি এবং আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতরা (অনুসারি)। মিনার প্রান্তরে ৮ জিলহজ জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও আজকের ফজর- এ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় নবীজির (সা.) সুন্নত। সে অনুযায়ী গতকাল সারা রাত মিনায় তাঁবুর মধ্যে ইবাদত-বন্দেগি ও রোনাজারি করে কাটান হাজিরা। আজ মিনায় ফজর নামাজ আদায় করে সূর্যোদয়ের সময় হাজিরা আরাফার ময়দানে সমবেত হবেন। পুরুষ হাজিদের পরনে শুধু সেলাইবিহীন সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র (ইহরাম)। আরাফার ময়দানে হাজিরা আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। তারা এখানে খুতবা শুনবেন এবং একসঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন।

আরাফার ময়দানে উপস্থিত সব হাজির মনে অনুরণিত হচ্ছে প্রিয়নবীর (সা.) ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ। দেড় হাজার বছর আগে এ ময়দানে দাঁড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে খুতবা দিয়েছিলেন আল্লাহর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। বিদায় হজের খুতবায় নবীজি (সা.) ঘোষণা করেছিলেন, আজ থেকে ইসলামকে পরিপূর্ণ ধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম।

আজ সূর্য অস্ত যাওয়ার পর হাজিরা তালবিয়া পড়তে পড়তে আরাফা থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সেখানে পৌঁছে (এশার সময়) একত্রে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। এশার নামাজ কসর পড়বেন। এরপর শয়তানকে মারার উদ্দেশে রাতেই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ছোট ছোট (মটরের দানার সমান) ৪৯টি কঙ্কর সংগ্রহ করবেন।

এখানে রাতযাপন করে পরদিন স্থানীয় সময় ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয় হওয়ার কিছু পূর্বে তালবিয়া পড়তে পড়তে মিনায় ফিরে দুপুরের আগে জামারাতুল আকাবায় (বড় শয়তানের ওপর) ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পরপর সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। এ সময় এখানে অনেক ভিড় হয়, কারণ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কঙ্কর নিক্ষেপ করা মুবাহ এবং সূর্যাস্ত থেকে ফজর পর্যন্ত নিক্ষেপ করা মাকরুহ।

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের পর পুরুষ হাজিরা কোরবানি করে মাথার চুল হলক (মুণ্ডানো) বা ছোট করবেন। মহিলারা চুলের অগ্রভাগ এক ইঞ্চি পরিমাণ ছোট করবেন। তারপর মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত (তাওয়াফে ইফাদা) করবেন। সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করবেন। এরপর আবার মিনায় ফিরে আসবেন। মিনায় ১১ ও ১২ জিলহজ তিনটি জামারায় ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। প্রথমে ছোট শয়তান, তারপর মেজো শয়তান এবং তারপর বড় শয়তান।

হজের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করার আগে পবিত্র কাবা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করা বিদেশি হাজিদের জন্য ওয়াজিব। তারপর উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে মদিনা মুনাওয়ারা সফর করে নবীজির (সা.) রওজা মুবারক জিয়ারত করার মাধ্যমে হজ পরিপূর্ণতা লাভ করে।

জুলাই থেকে ফিরতি হজ ফ্লাইট : ২ জুলাই ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে হজ করতে গেছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন। হজ অফিস জানিয়েছে, চলতি বছর ৩২৫টি ফ্লাইট হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরব যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর