বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
জমবে এবার ঈদ রাজনীতি

জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে বিএনপি নিচ্ছে আন্দোলনের প্রস্তুতি

সব নেতাকে নিজ এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে বিএনপি নিচ্ছে আন্দোলনের প্রস্তুতি

জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। এ জন্য পবিত্র ঈদুল আজহায় সব নেতাকে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই এলাকায় অবস্থান করছেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে নেতাদের দ্রুত ঢাকায় ফেরার নির্দেশও দিয়েছে হাইকমান্ড। আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকেই সমমনাদের নিয়ে আন্দোলনে নামতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এর আগে রাজধানীতে জুলাই মাসে বড় ধরনের সমাবেশ বা গণজমায়েত করা হবে। জেলা পর্যায়েও থাকবে পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১০ দফার ভিত্তিতে বিএনপি গত ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে। সে ১০ দফার আলোকে সরকারের বিদায়ের লক্ষ্যে একদফা ঠিক করা হচ্ছে। একদফার বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে খুব সহসা ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ঈদ। পবিত্র ঈদুল আজহায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজ নিজ এলাকায় যান। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করতে এ ঈদকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ এলাকায় গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন, যারা এখনো কারাগারে আছেন, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ রয়েছে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৫ বছর ধরে শত প্রতিকূলতার মধ্যে নিজ নির্বাচনী এলাকায় নাটোরে ঈদ উদযাপন করে চলেছি। এবারের ঈদেও এলাকায় এসেছি। এবার নেতা-কর্মীদের নিয়ে সরকার পতনের একদফার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

জানা যায়, আন্দোলনের মূল দাবি ‘একদফা’র মোড়কে ভিতরে আরও কয়েকটি দাবি থাকবে। কয়েকটি দফাকে একদফা আকারে ঘোষণার চিন্তাভাবনা প্রায় চূড়ান্ত। এ ব্যাপারে সমমনা শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও প্রায় শেষ। 

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি, নেতা-কর্মীদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি- এসব মিলিয়ে ‘একদফা’ হবে। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করেই তারা ‘একদফা’ দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নামতে চায়। একদফা ও যৌথ ঘোষণাপত্র নিয়ে শেষ পর্যন্ত সব সমমনা বিরোধী জোট ও দলের সঙ্গে কোনো কারণে ঐকমত্য না হলে বিএনপি তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফরম থেকেও একদফা আন্দোলন ঘোষণা করতে পারে। আর সেক্ষেত্রে দাবি আদায়ে মিত্ররা যার যার অবস্থান থেকে সে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে একদফা আন্দোলনের পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্তের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আগের কয়েকটি বৈঠকের মতো এ বৈঠকেও ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ নীতি-নির্ধারক মনে করছেন, বিএনপির সামনে এখন আর খুব বেশি সময় নেই। তাদের যা করার সেপ্টেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। ঘোষণাপত্র নিয়ে আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। এখন শুরু করতে হবে এক দফার আন্দোলন।

বিএনপি এবং তাদের সমমনা শরিক দলের একাধিক নেতা জানান, মোটা দাগে তিনটি দফায় আটকে রয়েছে বিএনপি প্রণীত ৩১ দফা খসড়া যৌথ রূপরেখাটি। সেগুলো হলো- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি ও এমপিদের ক্ষমতা এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম। তবে দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রয়োজনীয় ছাড় দিয়ে ন্যূনতম ঐকমত্যের জায়গাগুলো নির্দিষ্ট করে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্তকরণের ব্যাপারে একমত হয়েছেন।

জানতে চাইলে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বিএনপির আন্দোলন চলমান। দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে সারা দেশে তারুণ্যের সমাবেশ চলছে। এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে। এ ঢেউ সময়মতো উত্তাল হয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় লাভ করবে। বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা জানান, শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই শুরু হবে একদফার আন্দোলন। এর মধ্যে থাকতে পারে গণসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা ও গণ অবস্থান। এরপর সময় ও সুযোগ বিবেচনায় ঘোষণা করা হবে কঠোর কর্মসূচি। সেক্ষেত্রে ঢাকা ঘেরাও, ঢাকায় অবস্থানের মতো কর্মসূচি রয়েছে তাদের পরিকল্পনায়। সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে দলের সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পালন করা হয় এসব কর্মসূচি। আগামী দিনের আন্দোলনে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ে সারা দেশে তারুণ্যের সমাবেশ করছে দলটি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশালে শেষ হয়েছে এ কর্মসূচি। ঈদের পর আরও কয়েকটি বিভাগীয় শহরে একই কর্মসূচি পালন করা হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের মোমেন্টাম তৈরিতে ঈদের পর আরও কিছু কর্মসূচি পালন করবে দল। শ্রমিক দল, কৃষক দল ও মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে পদযাত্রা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর