বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাড়ি ফিরছে মানুষ, সড়কে চাপ

যানজট বৃষ্টি ভোগান্তি বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়ি ফিরছে মানুষ, সড়কে চাপ

ঈদযাত্রায় চাপ বেড়েছে ট্রেনে। ভিতরে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গতকাল বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তোলা -রোহেত রাজীব

পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে বাড়ির পথে ছুটছে মানুষ। রাজধানী ফাঁকা হতে শুরু করেছে। গতকাল সরকারি ছুটি থাকায় এবং বেসরকারিদের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় দুপুর থেকে সড়কে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। একই সঙ্গে বাড়িফেরা মানুষের সঙ্গী ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট থাকায় কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বাড়ি ফেরা মানুষের। সড়কপথের মতো রেলপথেও যাত্রীদের চাপ ছিল। তবে ভিন্ন চিত্র ছিল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। 

গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। বৃষ্টি, গরম আর যানজটের ভোগান্তির মধ্যেও ঘরমুখো মানুষের চেহারায় দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। তারা জানিয়েছেন, যত কষ্টই হোক বাড়িতে গিয়ে ঈদ করাই আনন্দের। প্রিয়জনের সান্নিধ্য ভুলিয়ে দেয় সব কষ্ট।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এদিন ভোর থেকেই যাত্রীরা টার্মিনালে আসতে শুরু করেন। অনেক যাত্রীই ঈদের আগাম টিকিট কাটেননি। তারা তাৎক্ষণিকভাবে টিকিট পেতে আগেভাগেই টার্মিনালে হাজির হয়েছেন। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানই তাৎক্ষণিক টিকিট দিতে পারছে না। আগাম টিকিটের ক্ষেত্রে মঙ্গলবারের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. আল আমিন। তিনি বলেন, ‘আজকের কোনো টিকিট নেই। সব অনলাইনে আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।’ বরিশালগামী যাত্রী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বাসে গেলে এখন অন্তত এক দিন সময় বাঁচে। তাই লঞ্চে যাই না, বাসে যাই। টিকিট নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই।’ একই  চিত্র দেখা গেছে মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিানালে। নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে সড়কে গাড়ির চাপ থাকায় বিভিন্ন স্থানে যানজটের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে আশুলিয়া, বাইপাইল, চন্দ্রা এলাকায়। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জগামী যাত্রীদের কালিয়াকৈর ও গাজীপুর চৌরাস্তায় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কুমিল্লা ও চট্টগ্রামী যাত্রীদের শনিরআখড়া, চিটাগাং রোড ও কাঁচপুর এলাকায় কিছুটা যানজটে পড়তে হয়েছে। সড়কে গাড়ির চাপ থাকায় এসব স্থানে যানজট বেড়েছে।

এদিকে পোশাক কারখানায় ছুটি শুরু হওয়ায় পোশাক শ্রমিকরা বাড়ি যেতে শুরু করেছেন। সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিককে যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। বাস না পেয়ে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও পিকআপে করে গন্তব্যে রওনা দেন।

সাভারের নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে কথা হলে পোশাক শ্রমিক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদের ছুটি ছাড়া বাড়িতে আর যাওয়া হয় না। এ জন্য সামান্য কষ্ট হলেও তা মেনে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, বাসের জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। সঙ্গে ছোট বাচ্চা আছে। বৃষ্টিতে ভিজে যাবে তাই ট্রাকে করে দাঁড়িয়ে বাড়িতে যাচ্ছি। এ ছাড়া ঈদ করতে অন্যবারের মতো এবারও অনেকে বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। বৃষ্টির জন্য বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এ মোটরসাইকেল আরোহীরা রেইনকোট ব্যবহার করছেন।

ট্রেনে যাত্রীদের চাপ : ঈদযাত্রায় চাপ বেড়েছে ট্রেনে। গতকাল সকাল থেকে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেনে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ট্রেনের ভিতরে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জানালা দিয়েও মানুষকে ট্রেনে উঠতে দেখা গেছে। সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, ঠিক ১০টায় পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস স্টেশনে প্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন যাত্রীরা। দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে না পেরে অনেকেই জানালা দিয়ে ওঠেন ট্রেনে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী ও শিশুরা। ট্রেনের ভিতরেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। তবে এর আগে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই হাজারো ঘরমুখো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো স্টেশন। ভোগান্তি এড়াতে যাত্রীরা ট্রেন ছাড়ার এক থেকে দুই ঘণ্টা আগেই স্টেশনে পৌঁছান। ঈদযাত্রার গেল কয়েক দিন স্বাভাবিক ভিড় থাকলেও সোমবার রাত থেকেই বেড়েছে যাত্রীর চাপ। গতকাল সকাল থেকেই অধিকাংশ ট্রেন যথাসময়েই ছেড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার জানিয়েছেন, আজ সকালের সব ট্রেন বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে চলাচলকারী নীলসাগর একতা সঠিক সময়ই ছেড়ে গেছে। দু-একটা ট্রেন ২০-৩০ মিনিট লেট হয়েছে। ঈদের সময় এটা স্বাভাবিক। ঈদযাত্রা স্বস্তির হচ্ছে। সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। আশা করছি এবার কোনো শিডিউল বিপর্যয় হবে না।

অন্যদিকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। সড়ক ও রেলপথে ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চিত্র পুরোপুরি আলাদা। টার্মিনালে যাত্রীর উপস্থিতি এতটাই কম যে, নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে না লঞ্চগুলো। গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সরেজমিন দেখা যায়, টার্মিনালের পন্টুনে বাধা আছে দক্ষিণাঞ্চলগামী সারি সারি লঞ্চ। দু-তিনটি লঞ্চে যাত্রীদের দেখা গেলেও বাড়তি কোনো চাপ নেই। যাত্রীর চাপ কম থাকায় লঞ্চ কর্মচারীদের তেমন কর্মব্যস্ততাও নেই।

এদিকে ঈদযাত্রার সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বেলা সাড়ে ১১টায় পরিদর্শন করেন তিনি। তার সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের স্টাফ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমাদের যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। ঈদ উপলক্ষে কয়েকদিনে যাত্রী বেশ বেড়েছে। সোমবার রাত থেকে ভালোই যাত্রী পাচ্ছি। বেশির ভাগ কেবিন আগে থেকেই বুকিং দেওয়া। এ জন্য খালি যাচ্ছে না। এ ছাড়া ডেকেও ভালো লোক হচ্ছে।

ঈদযাত্রায় বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য চলছে : যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌপথের বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সঙ্গে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। তিনি বলেন, এবারের ঈদে যানজট ও জনজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসনীয় তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও ঈদযাত্রায় বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের পথে বিভিন্ন রুটে গত সোমবার থেকে যাত্রী ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল। সকাল থেকে এই ভাড়া আরও বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ উত্তরবঙ্গের পথে যাত্রী প্রতি দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

যাত্রী হয়রানির অভিযোগে জরিমানা : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষকে হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর কমলাপুরে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার রাতে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত এ জরিমানা করে। গতকাল র‌্যাব জানায়, কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও বেশি দামে বিক্রি, বিভিন্ন পরিবহনের রেল স্টেশনগামী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির অভিযোগে এই জরিমানা আদায় করা হয়।

এর আগে সোমবার রাতে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন কমলাপুর রেলস্টেশনে স্থাপিত র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিদর্শন করেন এবং ঘরমুখী সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে তাদের যাত্রা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চান।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশব্যাপী ঘরমুখী মানুষকে নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি র‌্যাবের সেবা সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সব ব্যাটালিয়ন কাজ করছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর