বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

পবিত্র হজ পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র হজ পালিত

বিশ্ব মুসলিমের বার্ষিক মহাসম্মিলন পবিত্র হজ ছিল গতকাল। ২০ লাখের বেশি মুসলমান নারী-পুরুষ সৌদি আরবে আরাফার ময়দানে সমবেত হয়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের মাধ্যমে নিজেদের হজ আদায় করেন।

হজের খুতবা, সালাত, তেলাওয়াত, জিকির-আজকার শেষে হাজিসাহেবানরা দোজাহানের মালিক ও সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর দরবারে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। ইসলাম ধর্মের বৃহত্তম এই ধর্মীয় জমায়েতে সমবেত হয়ে হজপালনকারী ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোদনভরা কণ্ঠে বলতে থাকেন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক; লা শারিকা লাক’। অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই। সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ এ সেই ময়দান দেড় হাজার বছর আগে যেখানে দাঁড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে খুতবা দিয়েছিলেন আল্লাহর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। বিদায় হজের খুৎবায় নবীজি (সা.) ঘোষণা করেছিলেন, ‘আজ থেকে ইসলামকে পরিপূর্ণ ধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম।’

নবীজির (সা.) সুন্নাত অনুযায়ী দুপুরে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর আরাফার ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা শুরু হয়। খুতবা দেন মসজিদুল হারামের খন্ডকালীন ইমাম, সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ ও মুফতি বোর্ডের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ। দীর্ঘ লিখিত খুতবায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য ও সমৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। খুতবা শেষে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়াও করা হয়। পবিত্র হজের খুতবায় ইসলামের সঠিক পথে মুসলমানদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, দৃঢ়ভাবে আল্লাহর রজ্জু আঁকড়ে ধরাই মুক্তির একমাত্র উপায়। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। খুতবায় মুসলমানদের আমল পরিশুদ্ধ করার প্রতি আহ্বান জানিয়ে পারস্পরিক আচরণ, লেনদেন পরিশুদ্ধ করার তাগিদ দেওয়া হয়। সৃষ্টির প্রতি দয়া ও সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। খুতবায় আল্লাহর প্রিয় হাবিব নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদিস উল্লেখ করে বলা হয়, যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়ার্দ হবেন, আল্লাহ তার প্রতি দয়াশীল হবেন। এ সময় বলা হয়, এক মুমিন আরেক মুমিনের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে এর দ্বারা আল্লাহর রহমত অর্জিত হবে। খুতবায় আমলের ত্রুটির কারণে মুসলিমরা দুর্যোগের শিকার হবেন বলেও উল্লেখ করা হয়। এ সময় ধৈর্য ধারণের কথা বলা হয়। একই সঙ্গে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হতেও আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া খুতবায় মুসলমানদের আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে ও জাকাত আদায়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়। খুতবায় আরও বলা হয়, আল্লাহ তায়ালার হুকুম কখনো পরিবর্তন হয় না। আল্লাহ তায়ালা মানুষ এবং জিন জাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করছেনে। এ জন্য আল্লাহর একাত্মবাদের বিষয়টি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। খুতবায় হারামাইন শরিফাইনের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার আহ্বান জানানো হয়। পরে খতিব মুসলমানদের ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। হজের খুতবা শেষে জামাতের সঙ্গে ২০ লক্ষাধিক হজপালনকারী একসঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। হজের খুতবা সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ বিশ্বের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়া সৌদি আরবের সরকার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাসহ ১৪টি ভাষায় খুতবার অনুবাদ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেন। হজের বিধান মোতাবেক গতকাল (স্থানীয় সময় ৯ জিলহজ) সূর্যাস্ত পর্যন্ত হজ পালনকারী হাজিসাহেবানরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন। এরপর মুজদালিফায় গিয়ে এশার ওয়াক্তে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করেন। এরপর জামরাতে শয়তানকে মারার জন্য ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করেন এবং সেখানে রাতযাপন করেন। যারা গতকাল হজে অংশগ্রহণ করেননি তারা আজকে সৌদি আরবে (স্থানীয় সময় ১০ জিলহজ) ঈদুল আজহার নামাজ পড়বেন ও কোরবানি করবেন। আর হাজিরা মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর আজকে মিনায় ফিরে আসবেন এবং দুপুরের আগেই জামারাতুল আকাবায় (বড় শয়তানের ওপর) ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সাতটি কঙ্কর ছুড়বেন। এরপর হাজিরা কোরবানি করে মাথার (পুরুষরা) চুল মুন্ডানো বা ছোট করবেন। মহিলারা চুলের অগ্রভাগ ১ ইঞ্চি পরিমাণ ছোট করবেন। তারপর মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারত (তাওয়াফে ইফাদা) করবেন। সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করবেন। এরপর আবার মিনায় ফিরে আসবেন। সেখানে ১১ ও ১২ তারিখ তিনটি জামারায় ‘আল্লাহু আকাবর’ বলে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। পবিত্র হজের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করার আগে পবিত্র কাবা শরিফের বিদায়ী তাওয়াফ করা বিদেশি হাজিদের জন্য ওয়াজিব। উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে মদিনা মুনাওয়ারার সফর করে নবীজির (সা.) রওজা মোবারক জিয়ারত করার মাধ্যমে হজ পরিপূর্ণতা লাভ করে।

সর্বশেষ খবর