রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

শরিক নিয়ে টেনশনে বিএনপি

আন্দোলনের আগে আসন বণ্টন দাবি, স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না দলের হাইকমান্ড

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

শরিক নিয়ে টেনশনে বিএনপি

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার কথা বলছে বিএনপি। কিন্তু চূড়ান্ত আন্দোলনে মাঠে নামার আগেই নিজেদের আসন নিশ্চিত করতে চাইছে সমমনারা। সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, শরিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিএনপির ইতিহাস সুবিধার নয়। সারা বছর বিএনপির সঙ্গে ছায়ার মতো রাজপথে থাকলেও নির্বাচন এলে ভুলে যায় রাজপথের শ্রমের কথা। আর এ জন্যই আগামী আন্দোলনের মাঠে নামার আগেই মূল্যায়নের বিষয়টির কিনারা করতে চাইছে সমমনারা। দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপির জোট রাজনীতির অন্যতম উদ্যোক্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর, ভাষাসৈনিক অলি আহাদ, আনোয়ার জাহিদ, শফিউল আলম প্রধান, শওকত হোসেন নিলু, এ এস এম সোলায়মানের মতো ব্যক্তিত্ব যথাযথ গুরুত্ব পাননি। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই সমমনারা চূড়ান্ত আন্দোলনের আগেই বিএনপির কাছে স্পষ্টতা আশা করলেও সে বিষয়ে গণমাধ্যমে সরাসরি বক্তব্য দিয়ে বিএনপির বিরাগভাজন হতে চায় না। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার যখন থাকবে না, তখন অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটবে। তবে তাঁর আশা সরকারবিরোধী তথা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যারা রাজপথে আছে তারা জোটবদ্ধ থাকবে। মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বিএনপি বা কোনো জোটের সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের কোনো আলোচনা হয়নি।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি যেমন অত্যাচারিত হয়েছে তেমনি আমরাও হয়েছি। তিনি জানান, তিনি পাঁচবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁর মতে, চলার পথে কেউ ইমানদার হবে, কেউ বেইমান হবে। তাঁর বিশ্বাস, সমমনাদের বিএনপি মূল্যায়ন করবে। এনডিপি চেয়ারম্যান কারি মো. আবু তাহের এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার আগে বিএনপির কাছ থেকে কমিটমেন্ট প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, তারা রিস্ক নেবেন, বিএনপিরও দায়িত্ব নিতে হবে। জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। তিনি আশাবাদী, সময়মতো বিএনপি মূল্যায়ন করবে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন এখন মূল লক্ষ্য আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা। আশাবাদী এ আন্দোলনের বিজয় হলে বিএনপি মূল্যায়ন করবে। এলডিপি একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে রয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সময় হলে ঘোষণা অনুযায়ী একসঙ্গে সরকারও গঠন করা যাবে। জাতীয় পার্টির (জাফর) যুগ্ম মহাসচিব এ এস এম শামীম বলেন, হালুয়া-রুটির ভাগাভাগি নয়, আন্দোলন জোরদার করে সরকার পতন ঘটানোই তাদের প্রধান লক্ষ্য। নির্বাচনের সময় বিএনপির কাছে দাবি থাকবে জাতীয় পার্টির (জাফর) সাবেক সংসদ সদস্যসহ জনপ্রিয় নেতাদের মূল্যায়ন করার।

জানা যায়, পাঁচ মাস পর জাতীয় নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে এ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিএনপিসহ প্রায় অর্ধশত সমমনা দল। দুই যুগের বেশি সময় একসঙ্গে রাজনীতি করার পর গেল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের আগে হঠাৎ করেই ২০-দলীয় জোট বিলুপ্ত করা হয়। এতে শরিকরা দুটি প্ল্যাটফর্মে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। জোটের শরিকরা আক্ষেপ করে বলছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই ক্ষমতায় বিভোর হয়ে নতুন নতুন রাজনৈতিক মোর্চা তৈরি করে। আর বেমালুম ভুলে যায় আমাদের রাজপথের শ্রমের কথা। সূত্র জানান, ১২-দলীয় জোট, ১১-দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চসহ শরিকরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি কীভাবে বা কতটুকু মূল্যায়ন করবে তার একটি নিশ্চয়তা চায়। এ নিয়ে সম্প্রতি রাজধানীর পল্টনের এক অফিসে বসেছিলেন ১২-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। ১১-দলীয় জোটও নিজেরা বসে একই বিষয়ে আলোকপাত করেছে। ১৩ জুন এনডিপির উদ্যোগে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠকে বসেন ১৭ দলের প্রতিনিধি। সে বৈঠকেও একই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন উপস্থিত নেতারা।

শরিকরা বলছেন, সারা বছর বিএনপির সঙ্গে রাজপথে সংগ্রামে থাকি আমরা, অথচ নির্বাচন সন্নিকটে এলেই বিভিন্ন নামে নতুন জোট তৈরি করে আমাদের অবহেলিত রাখা হয়। বিএনপির দুর্দিনে তাদের দেওয়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। হঠাৎ করেই জোট বিলুপ্তির ঘোষণায় হতাশ হয়েছেন জোট নেতারা। কোনো কোনো জোট নেতা এ বিষয়ে বিএনপির সমালোচনা করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আগেই আসনের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর