রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী

আবারও নৌকায় ভোট দিন

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

আবারও নৌকায় ভোট দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মোনাজাত করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা এনেছে, অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে, আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং দেশবাসীর জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। আগামী সাধারণ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দিন। গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

গত সাড়ে ১৪ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলায়। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, যারা চায়নি আওয়ামী লীগ কোনো দিন ক্ষমতায় আসুক, যারা চায়নি কখনো এদেশের মানুষ আবার পেটভরে ভাত খাক, মানুষের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হোক, রোগে চিকিৎসা পাক, শিক্ষা পাক, তাদের প্রতি আমাদের চ্যালেঞ্জ যে, এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করেছেন, আমার বাবা যে লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীন করেছেন সেটা আমি পূরণ করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই তাঁর লক্ষ্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা, অবকাঠামো উন্নয়ন করা এটাই তো আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে চাই।

‘একটা মহল চোখ থাকতে অন্ধ’- এ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা দেশের ভাবমূর্তি সারা বিশ্বে উজ্জ্বল করতে পেরেছি। কিছু তো আছেই যারা দেশের কোনো ভালোই চোখে দেখে না। যারা দেখে না চোখে, চোখ থাকতে অন্ধ, তাদের বিষয়ে কিছু বলার নেই। তারা দেখে না কিন্তু ভোগ করে।

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, কিছু মানুষ সারা দিন কথা বলার পরও বলে, ‘কথা বলার অধিকার নাই।’ সারা দিন কথা বলে তারপর যদি বলে ‘কিছুই বলতে পারি না, কথা বলার অধিকার নাই।’ তিনি বলেন, এদের ব্যাপারে করুণা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। এদের আমরা করুণাই করি।

রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজসহ কোটালীপাড়ার অবকাঠামো উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই কোটালীপাড়ায় আসতে গেলে কষ্ট ছিল, চলাচলে কষ্ট ছিল। এখন আর সে কষ্ট নেই। কোটালীপাড়াবাসীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা-মা, নিজের ভাই নেই। আপনারাই আমার আপনজন। আপনারাই আমার সব কাজ করে দেন।

পদ্মা সেতুর সুফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ। তারা মিথ্যা অপবাদ দিতে চেয়েছিল, আমি নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি, এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাদের অপবাদের প্রতিবাদ করে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেই শক্তিটা কিন্তু আপনারা জুগিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে একটি করে নিম, বকুল এবং আম গাছের চারা রোপণ করেন। পরে নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগে গোপালগঞ্জে দুই দিনের সফরে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে সড়কপথে কোটালীপাড়া এসে পৌঁছান। কোটালীপাড়া কর্মসূচি সম্পন্ন করে সড়কপথে দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া পৌঁছান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় ৩ বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সৌধের বেদির সামনে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। পরে পবিত্র ফাতেহা পাঠ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ রকিব হোসেন, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাবুদ্দিন আজম, গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুন্সী আতিয়ার রহমান, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল বাসার খায়ের, পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। রাতে টুঙ্গিপাড়ায় পৈতৃক বাসভবনে অবস্থান করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

সফরের দ্বিতীয় দিন আজ সকালে তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। গোপালগঞ্জ সফর শেষে বিকালে সড়কপথে আজ ঢাকায় ফিরে যাবেন শেখ হাসিনা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে গোপালগঞ্জে উৎসবের আমেজ। শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে রং-বেরঙের ব্যানার-পোস্টার, প্ল্যাকার্ড টানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা হিসেবে লাখ টাকা পেল আঁখি : দিনাজপুরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আঁখিকে ঈদ শুভেচ্ছা হিসেবে ১ লাখ টাকা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা কার্ডে ছবি স্থান পাওয়ার পর তাকে শুভেচ্ছা হিসেবে এ টাকা দেওয়া হয়। গত বুধবার দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার আঁখির হাতে ১ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদসহ আঁখির বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন।

জন্ম থেকেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আঁখি দিনাজপুর পৌর এলাকার পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গার পুরনো পুস্তক ব্যবসায়ী আনারুলের মেয়ে। সে দিনাজপুর বধির ইনস্টিটিউটের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ঈদ উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত আঁখি ইশারা ভাষায় এত ভালোবাসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাঁর জন্য দোয়া করবে বলে জানায়। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আঁখির মা শাহানাজ পারভীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে আঁখির আঁকা ছবি দেওয়ার পর আবার ঈদ উপহারের ১ লাখ টাকা প্রদানে আমরা অনেক খুশি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর