রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকায় ফিরছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় ফিরছে মানুষ

ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল -রোহেত রাজীব

ঈদুল আজহার ছুটি শেষ। ছুটি শেষে কর্মস্থল ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। বাস, ট্রেন আবার কেউ মাইক্রোতে ঢাকায় ফিরছে। তবে এখনো ঢাকা থেকে গ্রামে যাচ্ছে অনেকেই। গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ ও মহাখালী এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। একই সঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়েও এমনই চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, ফিরতি মানুষের চেয়ে ঢাকা ছাড়ার মানুষই বেশি। এনা, স্টার লাইন ও কয়েকটি বাস-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘আজ (গতকাল) শনিবার হওয়ায় সরকারি অফিসের পাশাপাশি বেসরকারি অনেক অফিস বন্ধ। তাই ঢাকা ফেরা মানুষের চাপ তুলনামূলক কম। তবে কাল (রবিবার) সকাল থেকে চাপ বাড়তে পারে। আর যারা ফিরছে তাদের বেশির ভাগই ঈদ ঢাকায় করেছে এবং অনেকে ঈদের বাড়তি চাপ নিতে চায়নি।’ ঢাকায় ফিরে আসাদের অনেকেই ফিরছেন পরিবার নিয়ে। তবে তাদের বেশির ভাগ বেসরকারি চাকরিজীবী। ঈদের যাত্রাপথের ভোগান্তি পেরিয়ে বাড়ি যাওয়া এবং পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে কর্মক্ষেত্র ঢাকায় ফিরতে পেরে বেশ খুশি তারা। মহাখালীতে কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা পরিবহন কাউন্টারে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ফেরার জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। কাউন্টারের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটি এখনো অবশিষ্ট থাকায় ঢাকায় মানুষ কম ঢুকছে। কিছু মানুষ ফিরলেও ঢাকা থেকে যাওয়ার সংখ্যাটা তুলনামূলক বেশি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসগুলো এখনো সিট ফাঁকা রেখে ঢাকায় ঢুকছে, যা অন্যান্য ঈদের পর সচরাচর দেখা যায় না। আশা করছি আজকের দিনের পর থেকে (রবিবার) মানুষ ঢাকায় ঢুকতে থাকবে।’ কিশোরগঞ্জগামী উজান ভাটি পরিবহনের কাউন্টারমাস্টার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঢাকায় আসার পরিবর্তে এখনো অসংখ্য মানুষ ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছে। ঈদের ছুটি কবে থেকে শেষ আমি জানি না। তবে মনে হয় ছুটি শেষ হলে সবাই ফিরে আসবে।’ কুমিল্লা থেকে ফেরা তিশা বাসের সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ (শনিবার) ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ কম। আজ বাসের ১০ সিট খালি রেখে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় ফিরেছি। আশা করি কাল (রবিবার) থেকে যাত্রীর চাপ বাড়বে। কারণ কাল থেকে সরকারি অফিস-আদালত খুলবে।’

ঢাকা থেকে জামালপুর যাচ্ছিলেন সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে জামালপুর রোডে প্রচণ্ড যানজট হয়, তাই ঈদ ঢাকায় করেছি। এবার রাস্তাঘাট ফাঁকা, তাই বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু কাউন্টারে এসে দেখি প্রচণ্ড ভিড়।’

এ সময় ঢাকায় ফিরতি যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ লোক চাকরির কারণে ঢাকায় ফিরছেন। সঠিক সময়ে ঢাকায় ফেরাটাও চ্যালেঞ্জ। পথে কিছুটা ভোগান্তি হলেও নিরাপদে কর্মস্থল ও গন্তব্যে ফেরা তাদের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সকালের দিকে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ ছিল কম। তবে দুপুরের পর থেকে সেই চিত্র কিছুটা পাল্টে যায়। দুপুরের পর স্টেশনে প্রবেশ করা প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রী ছিল কিছুটা বেশি। রাজধানীতে ফেরা মানুষজন বলছেন, ঈদের ছুটি শেষে আবারও জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে ফিরতে হয়েছে। কাল (রবিবার) সরকারি অফিস আদালত খুলবে। তাই যাত্রাপথের ভোগান্তি এড়াতে আগের দিনই রাজধানীতে ফিরে আসতে হয়েছে। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, যাত্রীদের মূল স্রোত আসবে রবিবার (আজ) থেকে। রাজশাহী থেকে ঢাকায় ফিরেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কাল ব্যাংক খোলা। তাই আজকে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের কেউ আসেনি। তারা আগামী সপ্তাহে আসবে। ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে রাজধানীতে ফিরেছেন সরকারি একটি অফিসের তৃতীয় শ্রেণির চাকরিজীবী ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত ছুটি শেষে সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত হতে হয়। কাল যেহেতু সবাই আসবে তাই ট্রেনে ভিড় হবে বেশি। এ জন্য আজই ঢাকায় চলে এসেছি।’

তবে গতকালও ট্রেনে করে গ্রামে গেছেন অনেকে। গতকাল বেলা ৩টার কালনী এক্সপ্রেসে করে সিলেটের পথে রওনা হন বৃদ্ধ হারুন আলী ও তার স্ত্রী খাদিজা। কথা হয় তাদের সঙ্গে। ঈদের সময় বাড়ি না যাওয়ার কারণ কী জানতে হারুন আলী বলেন, ‘ঈদের সময় ট্রেনে অনেক ভিড় থাকে। এ ছাড়া এখানে থাকার কারণে কিছু মাংস চেয়ে নিয়েছি মানুষের কাছ থেকে। বাড়িতে গেলে তো এগুলো পেতাম না। তাই আজকে বাড়ি যাচ্ছি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর