রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষ হচ্ছে এ মাসেই

♦ হোলি আর্টিজান হামলার সাত বছর ♦ সর্বোচ্চ সাজা বহালের আশা রাষ্ট্রপক্ষের

আরাফাত মুন্না

রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার সাত বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল ১ জুলাই। এ ঘটনায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এরপর আইন অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) আসে হাই কোর্টে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ মাসেই (জুলাই) শেষ হচ্ছে নৃশংস এই হামলার ঘটনায় করা মামলায় হাই কোর্টের শুনানি। হাই কোর্টের রায়েও সব আসামিকে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে বলে আশা রাষ্ট্রপক্ষের।

জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হোলি আর্টিজান মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষের দিকে। হাই কোর্টের যে বেঞ্চে হোলি আর্টিজান মামলার শুনানি হচ্ছে ওই বেঞ্চের একজন বিচারপতি হজে গেছেন। আশা করছি তিনি দেশে ফিরে এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বেঞ্চে বসবেন। এরপর তিন/চার দিবস শুনানি শেষে মামলাটি চূড়ান্ত রায় ঘোষণার জন্য প্রস্তুত হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, হোলি আর্টিজান মামলার বিচারিক আদালতের রায় পড়েছি। আশা করছি হাই কোর্টও এ রায় বহাল রাখবেন। উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে। আরও দুটি ধারায় তাদের কয়েকজনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আবদুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়েছে রায়ে। এরপর আইন অনুযায়ী বিচারিক আদালতের দেওয়া মত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় নথি আসে হাই কোর্টে, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। এরপর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হেসেনের নির্দেশে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয় পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি সংবলিত বই)।

সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি বহুল আলোচিত হোলি আর্টিজান মামলার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চকে মামলাটির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৬ জানুয়ারি মামলাটি হাই কোর্টের কার্যতালিকায় আসে এবং আপিল শুনানি শুরু হয়। এক মাসের বেশি সময় রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক পড়েছেন। সর্বশেষ গত ৩, ১৫, ১৭ ও ১৮ মে মামলাটির শুনানি হয়।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান-২-এ হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় জঙ্গিরা হত্যা করেছিল ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে, যাদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশি। হামলার পরদিন ২ জুলাই সন্ত্রাস দমন আইনে গুলশান থানায় মামলা করা হয়। গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলাটি তদন্ত করেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। হামলায় জড়িত মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও জীবিত আটজনকেই কেবল আসামি করা হয়।

সর্বশেষ খবর