রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রহস্যজনক আগুনে দগ্ধ হয়ে মা-ছেলের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর বাগমারায় তিন তলা একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে এক স্কুলশিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। আগুন থেকে বাঁচতে তিন তলা থেকে লাফ দিয়ে তার দুই ছেলে আহত হয়েছেন। তারা দুই ভাই দগ্ধও হয়েছেন। পরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক ছেলের মৃত্যু হয়। শুক্রবার ভোরে উপজেলার হাসনিপুর গ্রামের মাদারীগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

ওই স্কুলশিক্ষিকার নাম ফরিদা ইয়াসমিন (৪৫)। তিনি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার শিবপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং বাগমারার হাসনিপুর গ্রামের এজাজুল বাশার ওরফে স্বপনের স্ত্রী। দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া সন্তানের নাম রাফিউল বাশার (১৮)। আরেক ছেলে আহত রাশেদুল বাশার (২৫) ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। গতকাল সকালে বাগমারায় মায়ের পাশে দাফন করা হয়েছে রাফিউল বাশারকে। মারা যাওয়া রাফিউলের শরীরের ৫০ শতাংশ ও চিকিৎসাধীন রাশেদুলের শরীরের ২২ শতাংশ পুড়ে গেছে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তাদের স্বজন ও সাফিক্স প্রিক্যাডেট কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক জাকিরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। রাশেদুল একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এবং মারা যাওয়া রাফিউল উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, তিনতলা ভবনটি এক সময় ছিল আশা সিনেমা হল। সিনেমা হলটি বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা ও দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী এজাজুল কিনে নেন। সিনেমা হলের তৃতীয় তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। কয়েকজন ভাড়াটেও ছিলেন। তবে ঈদের কারণে তারা গ্রামের বাড়িতে গেছেন। এ ছাড়া ভবনের অধিকাংশ স্থান বিভিন্ন পণ্যের গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অগ্নিকাণ্ডের সময় এজাজুল বাসায় ছিলেন না। তিনি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। স্বজন, প্রতিবেশী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন (বৃহস্পতিবার) রাতের খাবার খেয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে তৃতীয় তলার বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন। ভোরে বাসার দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় আগুন পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রতিবেশীরা টের পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তাদের চিৎকারে ও আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে আগুন ছড়িয়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না লোকজন। পরে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হলে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। ততক্ষণে বাড়িতে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী জাকিরুল ইসলাম বলেন, তারা আগুন নেভানোর সময় দেখতে পান, তিনতলা থেকে দুই ভাই রাশেদুল ও রাফিউল দগ্ধ অবস্থায় লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যান। দ্রুত তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তারা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তিনতলার একটি কক্ষে স্কুলশিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনের পোড়া লাশ পান। উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত দুই ভাইকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছোট ছেলে রাফিউল বাশারের মৃত্যু হয়। বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, আগুনের সূত্রপাত ও ঘটনাটি রহস্যজনক বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বিষয়টি দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কিছু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাগমারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, দ্বিতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেখানে রান্নার ব্যবস্থা ছিল। চুলার আগুন থেকেই মূলত আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।

সর্বশেষ খবর