সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
পুলিশের গুলিতে তরুণ নিহত হওয়ার জের

দাঙ্গা লুটপাটে ভয়াবহ পরিস্থিতি ফ্রান্সে

প্রতিদিন ডেস্ক

দাঙ্গা লুটপাটে ভয়াবহ পরিস্থিতি ফ্রান্সে

ফ্রান্সে বিক্ষোভ সহিংসতা চলছে কয়েকদিন ধরে -এএফপি

আলজেরীয় বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সী নাহেল মেরজুকের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার থেকেই ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। কোনোভাবেই থামছে না সহিংসতা। টানা পঞ্চম রাতের মতো দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রাতে মার্সেই শহরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাতজুড়ে হামলাকারীরা প্যারিসের শহরতলির লহায়া লেস-রোজেসের মেয়রের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। দেশটির স্থানীয় সময় রাত দেড়টায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। সেই সময় ভিনসেন্ট জিনব্রুন তার অফিসে ছিলেন। অজ্ঞাত হামলাকারীরা তাদের বাড়ির গেট দিয়ে গাড়িতে করে হামলা চালায় এবং জ্বালিয়ে দেয়। বিবিসি বলছে, জিনব্রুনের স্ত্রী ও সন্তানেরা পালানোর চেষ্টা করলে তাদের ওপর আতশবাজি দিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে মেয়রের এক সন্তান আহত হয়েছে। এ ছাড়া চলমান সহিংসতা শনিবারেই ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে প্রায় ৪৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত চার দিনে অন্তত ২ হাজার ৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার মধ্যে শুক্রবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় ১ হাজার ৩১১ জনকে। ফ্রান্সের বিচার মন্ত্রী বলেছেন, গ্রেফতারদের মধ্যে ৩০ শতাংশেরই বয়স ১৮ বছরের কম। বিক্ষোভ থামাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বড় শহরগুলোতে।

ফ্রান্স২৪ জানিয়েছে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি লিওন গ্রেনোবেল এবং মার্সেইলে। এসব অঞ্চলে আগেও তীব্র বিক্ষোভ দেখা যায়। এই তিন এলাকায় সবচেয়ে বেশি পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানী প্যারিসেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি যে কোনো সময় আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফ্রান্সের বিচার মন্ত্রী এরিক ডুপন্ড-মোরেটি শনিবার জানিয়েছেন, গ্রেফতারদের মধ্যে ৩০ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক। বিক্ষোভকারীরা এখন গণপরিপ্রণগুলোকেও টার্গেট করছে বলে অভিযোগ করেছেন দারমানিন। তিনি দেশজুড়ে সব পাবলিক বাস ও ট্রামকে রাতে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিক্ষোভকে উসকে দেওয়ার কাজে যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করা না হয়, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, এসব ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে বিক্ষোভের কারণে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার জার্মানি সফর বাতিল করেছেন। রবিবার তার জার্মানিতে রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ সময়ে এসে তা স্থগিত করা হয়। প্যারিসের কাছেই একটি তল্লাশি চৌকিতে নাহেল নামের এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করে এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর প্রতিবাদেই শুরু হয় বিক্ষোভ। কোনো কারণ ছাড়াই একদম কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় ওই কিশোরকে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তার আইনজীবীর মাধ্যমে নেহালের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলেও জানিয়েছেন তার আইনজীবী লরেন-ফ্রাঙ্ক লিওনার্দ। কিন্তু তাতে চলমান বিক্ষোভের উত্তাপ কমেনি। নাহেলের মা ফ্রান্স ফাইভ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, যে পুলিশ কর্মকর্তা তার সন্তাকে হত্যা করেছেন, তার প্রতি তিনি ক্ষুব্ধ। আলজেরিয়া থেকে আসা এই অভিবাসী মা আরও বলেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তা নাহেলের চেহারা দেখেই তার জীবন কেড়ে নিয়েছেন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর