সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩০০ প্রার্থী ঠিক করছে জাতীয় পার্টি

একক না জোট সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

৩০০ প্রার্থী ঠিক করছে জাতীয় পার্টি

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আপাতত এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নেতা-কর্মীদের এমন নির্দেশনা

দিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিন সরকারের কঠোর সমালোচনা করে মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন জি এম কাদের। তিনি বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে, না জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেই কোনো জোট করবে, নাকি রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করবে- বিষয়টি স্পষ্ট হবে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি অনুযায়ী।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনী পরিস্থিতি এখন অনিশ্চিত। আপাতত আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রার্থী ঠিক করছি। জাতীয় নির্বাচনে জোট, না এককভাবে অংশ নেব, তা অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেনি জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘চলমান বিরোধিতা’ কোন দিকে গড়াবে, এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। জাপার একাধিক কো-চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি খানিকটা ঘোলাটে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শক্তির অবস্থান নিয়ে খানিকটা সন্দিহান জাপা। আর এ কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ কোন প্রক্রিয়ায় হবে, এ নিয়ে নীতিনির্ধারকরা এখনই সিদ্ধান্তে আসতে নারাজ। এ ছাড়া জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায় সে দিকটিও আমলে রেখেছেন জাপার সিনিয়র নেতারা। তারা বলছেন, ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতীক না পাওয়ায় রওশন এরশাদ ইমেজ সংকটে পড়েছেন। জাপার একাধিক সংসদ সদস্য এবং শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারক জানান, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি থাকলেও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্য হিসাব কিছুটা ভিন্ন। যোগ্য প্রার্থী সংকটের মধ্যেও সারা দেশে ৩০০ আসনে একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। পাশাপাশি সরকারি দলের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনের পথও খোলা রাখছে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে কমপক্ষে ১০০ আসন নিশ্চিত করবে জাপা। অন্য দিকে বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সংসদ সদস্যরা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার জোটশরিক দলগুলোকে ৪৫টি আসনে ছাড় দেয়। আর এর মধ্যে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় ২৯টি আসন। তবে নির্বাচিত হন ২২ জন। বাকি চারজন সংরক্ষিত নারী সদস্য। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে এবার আরও বেশি জোটগত মনোনয়ন পাওয়া যাবে বলে দলীয় নেতাদের অভিমত। তারা বলছেন, দলের সাংগঠনিক অবস্থা বিবেচনায় ৩০০ আসনের মধ্যে ৫০ জন যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা কষ্টসাধ্য। ৫০ জন একক নির্বাচনে অংশ নিলে কয়টি আসন পাওয়া যাবে তা দলের শীর্ষ নেতারা অবগত রয়েছেন। তাই পার্টির একটি বড় অংশ চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি বিএনপিসহ তাদের সমমনাদের আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম কাটিয়ে উঠতে পারে, তাহলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দেনদরবার করে যত বেশি আসন নেওয়া যায় ততই নিরাপদ। আর বিএনপি আন্দোলন করে সফল হলে জাতীয় পার্টির অবস্থান মোড় নেবে অন্য দিকে। সব মিলিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে, তা চূড়ান্ত হবে শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি অনুযায়ী।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৩০০ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তার দল। তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাদের বলেন, আপনারা সরকারের সমালোচনা করছেন। আপনারা কি বিএনপির দিকে চলে গেছেন?’ চুন্নু বলেন, ‘সরকারের সমালোচনা করা, ত্রুটি তুলে ধরা আমার দলের রাজনীতি। কিন্তু এটা করলে সরকারি দল ভাবে, বিএনপিতে যাবে কি না জাতীয় পার্টি। আবার সরকারের পক্ষে বললে বিএনপিভাবে আমরা সরকারে যাব কি না? নো, আমরা কারও সঙ্গে যেতে চাই না। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- জাতীয় পার্টি একটি আলাদা দল। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই মনোনয়ন দিয়ে অংশগ্রহণ করবে। কারও পক্ষে-বিপক্ষে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

 

 

সর্বশেষ খবর