সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

হেঁটে নিজ গ্রাম দেখলেন প্রধানমন্ত্রী

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

হেঁটে নিজ গ্রাম দেখলেন প্রধানমন্ত্রী

হেঁটে টুঙ্গিপাড়ায় নিজ গ্রাম ঘুরে দেখলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রামবাসীসহ নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলেন এবং তাঁদের কুশলাদির খোঁজখবর নেন। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে কাছে পেয়ে স্থানীয়রাও তাদের সুখ-দুঃখের কথা ভাগাভাগি করেন। নিজ জন্মভূমি টুঙ্গিপাড়ায় গত শনিবার ও রবিবার সরকারপ্রধান এভাবেই সময় কাটান। মিশে যান এলাকার মানুষের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দুই দিনের সফরে নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম দিন শনিবার গণভবন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কোটালীপাড়ায় পৌঁছে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এরপর কোটালীপাড়ার দলীয় নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিকালে তিনি জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। কোটালীপাড়া থেকে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুই হাত নেড়ে স্বাগত জানান। জবাবে স্থানীয় এমপি শেখ হাসিনাও হাত নেড়ে তাদের অভিবাদনের জবাব দেন। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে পৌঁছে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআন ও ফাতেহা পাঠের পর সমাধির সামনে ক্যানেল পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখেন। পরে পায়ে হেঁটে নিজ বাড়ি পর্যন্ত যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ভ্যাপসা গরমে প্রধানমন্ত্রীকে হাঁটতে বারণ করা হলেও তিনি জবাবে বলেছেন, ‘আমি এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি, আমার শৈশব কেটেছে এখানে। আমি যেমন এখানকার সন্তান, তেমনি এখানকার এমপি। কাজেই আমাকে বারণ করে তোমাদের (প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের) লাভ হবে না।’   

টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় অবস্থানকালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন জানান, কোটালীপাড়া থেকে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার পথ ২০ মিনিটের মতো। কিন্তু রাস্তার হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতির কারণে গাড়ির গতি স্লো করা হয়। রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ নেত্রীকে স্বাগত জানান। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও তাদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, গ্রামের রাস্তা ও নিজ বাড়ি থেকে টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পায়ে হেঁটে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এরপর স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছায় অংশ নেন।

প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বরদাস্ত করব না : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বরদাস্ত করব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব ভালো- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিই মেনে চলি। কিন্তু আমাদের উন্নয়নে বা আমাদের অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক, সেটা আমরা চাই না, সেটা আমরা বরদাস্ত করব না।

বিরোধীদের বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যাদের নিজের মাটিতে খুঁটায় জোর থাকে না, নিজের দেশের মানুষের ওপর আস্থা-বিশ্বাস যাদের থাকে না, দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। ওই তারাই যেয়ে ওখানে আর নালিশ। আর ওই সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা কথা, গুজব ছড়ানো ওই তারা করে বেড়ায়। তিনি বলেন, কিছু লোক আছে, কথায় কথায় নালিশ করে, তো নালিশ করে কী হয়, ওই যে কথায় আছে না নালিশ করে বালিশ পাবে। ওরা কিন্তু ওটাই পাওয়ার যোগ্য। 

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের মাটি ও মানুষের সংগঠন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন দিয়ে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছেন। এই সংগঠন দিয়ে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন।

নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান : বিএনপি-জামায়াত যাতে আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা যদি আবার ক্ষমতায় আসে, আবার এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, দেশের সর্বনাশ করে দেবে। কাজেই সেটা যেন তারা করতে না পারে সে জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। বিএনপির কাছে ক্ষমতা মানে ‘অর্থ বানানোর মেশিন’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এদের কাছে রাজনীতি বলে কিছু নেই, ক্ষমতা হচ্ছে তাদের অর্থ বানানোর মেশিন, ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জামায়াতের যে সন্ত্রাসী রূপ, এটাতে এদেশের মানুষ দেখেছে। তারা দেশের কোনো উন্নতি না, নিজের অর্থ-সম্পদ গড়েছে, বিদেশে পাচার করেছে, খালেদা জিয়ার ছেলেদের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা আমরা ফেরতও এনেছি। ওই অর্থ পাচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মানুষকে গুম করা, ভোট চুরির জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করা, এই সমস্ত অপকর্ম তারা করে গেছে। বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, কানাডার ফেডারেল কোর্ট এই কথাই বলেছিল যে বিএনপি একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে কথা বলার।

সেই খুনিদের যেন বিচার হয় : বিএনপির হাতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নির্যাতিত হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, কেউই বাদ যায়নি তাদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে, মানুষকে গুলি করে মারা, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারা, চোখ তুলে নেওয়া, হাত কেটে নেওয়া, এমন কোনো সন্ত্রাসী কাজ নেই বিএনপি না করেছে। বিএনপি-জামায়াত সরকার আমল এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন হত্যাকান্ড এবং সন্ত্রাসে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে আওয়ামী আইনজীবীদের কাজ করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে মারা, পুলিশ মারা, বিভিন্ন সময় আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা, বহু আসামি এখন ঘুরে বেড়ায়। এরা যেন ঘুরে বেড়াতে না পারে। এদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়। এদের যেন বিচার হয়।

এত সাহস থাকলে দেশে আসে না কেন? : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিউজিটিভ (পলাতক) হয়ে ওই লন্ডনে বসে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলে। চোরের বড় গলা কথায় আছে, সেই চোরের বড় গলাই আমরা শুনি। এত সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসে না কেন? তা তো আসতে পারে না। ওই সাহস তো দেখাতে পারে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের হত্যার চেষ্টা, আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতা-কর্মী হত্যা করেছে, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি এমন কোনো অপকর্ম নেই যে না করে গেছে। আজকে সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক।

সবার দোয়া চাই : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার দোয়া-আশীর্বাদ চাই আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমার বাবা যে কাজটা শুরু করেছিলেন সেটা সম্পন্ন করা। শেখ হাসিনা বলেন, আমিও আমার বাবার মতো জীবনটা উৎসর্গ করেছি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে। তিনি বলেন, আজকে সেই কষ্ট-ব্যথা বুকে নিয়েই আমার প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এদেশ হবে ক্ষুধা মুক্ত-দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ একটি জাতি।

মতবিনিময়কালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা বয়সের কথা তুলে ধরে অবসরে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় নেতা-কর্মীরা তাকে দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে দায়িত্বপালন করে যাওয়ার অনুরোধ করেন। স্থানীয়রা বলেন, তারা শেখ হাসিনাকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান এবং আগামীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। মতবিনিময় সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ। মতবিনিময় সভায় শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ রকিব হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আালী খান, সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাবুদ্দিন আজম, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার, মোল্লাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম ছানা,  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক সিকদার উপস্থিত ছিলেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাসার খায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ। এর আগে গোপালগঞ্জে দুই দিনের সফরের অংশ হিসেবে শনিবার সকালে গণভবন থেকে সড়ক পথে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া যান। সেখানে তিনি নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কোটালীপাড়ার কর্মসূচি শেষে দুপুরের পর বঙ্গবন্ধুকন্যা টুঙ্গিপাড়ার নিজের গ্রামের বাড়িতে যান এবং রাতে সেখানে অবস্থান করেন। সফরের দ্বিতীয় দিন গতকাল টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি শেষে বিকালে গণভবনে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

সর্বশেষ খবর