সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাজার টাকা ছুঁয়ে দাম কমছে কাঁচামরিচের

নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ। ঈদের জন্য ছয় দিন হিলি, বুড়িমারীসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় এলসি করা ভারতীয় কাঁচামরিচের ট্রাক দেশে ঢুকতে পারেনি। এর সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে কাঁচামরিচের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে পচনশীল এই মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় সিন্ডিকেট। এতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ।

কৃষি বিপণন অধিদফতর বলছে, কাঁচামরিচের উৎপাদন হ্রাস পাওয়া ও ভারতীয় কাঁচামরিচ বাজারে না আসায় পণ্যটির পাইকারি ও খুচরা মূল্য বেড়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরবরাহ কমে যাওয়ায় অস্বাভাবিক চড়া দামে পণ্যটি বিক্রি করছেন। তারা জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আমদানি করা কাঁচামরিচ নিয়ে কয়েকটি ট্রাক ভারত থেকে দেশেও ঢুকেছে। ফলে দাম দ্রুত কমে আসবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। 

কৃষি বিপণন অধিদফতরের বাজার মনিটরিংয়ের তথ্য অনুযায়ী গতকাল পাইকারি পর্যায়ে কাঁচামরিচের কেজি ছিল ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা। খুচরায় এটি কোথাও কোথাও ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় মানভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পণ্যটি। এমন কি কাঁচামরিচের উৎপাদন এলাকা যশোরেও পণ্যটির দাম ছিল অনেক বেশি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী যশোর বড় বাজারে গতকাল প্রতি কেজি কাঁচামরিচ পাইকারি ৫০০ থেকে ৫৫০ ও খুচরা ৫৪০ থেকে ৫৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে যশোর বড় বাজার মনিটরিং করা হয়। মনিটরিংয়ে দেখা যায়, অন্যান্য পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকলেও কাঁচামরিচের সরবরাহ খুবই কম ও মূল্য অস্বাভাবিক বেশি।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মজিবর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মরিচ গাছ পানিতে ডুবে গেলে ফুল ঝরে যায়। এ জন্য দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবার বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। এ সময় আমদানি বন্ধ থাকায় পণ্যটির সরবরাহ কমে গেছে। এই সুযোগে কাঁচামরিচের পাইকারি মোকামগুলোতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি আমরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোরসহ যে সব এলাকায় কাঁচামরিচ উৎপাদন হয়- সে সব এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে বগুড়াসহ কয়েকটি মোকামে পণ্যটির পাইকারি মূল্য কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে দাবি করেন তিনি। দাম কমায় পণ্যটির আমদানি বাড়াতেও কৃষি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৫৫ টন কাঁচামরিচ দেশে এসেছে। রাতে আরও আসার কথা রয়েছে।

এরই মধ্যে ৩৬ হাজার ৮৩০ টন কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেশে এসেছে ৯৩ মেট্রিক টন। ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের বাজারে কাঁচামরিচের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন এই নিত্যপণ্যটির আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, কলাপাড়ায় এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৫০  টাকা কেজি। পরবর্তীতে বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজি। এরপর কেজিতে ১০০ টাকা করে বাড়তে বাড়তে গতকাল সকালে কাঁচাবাজারে বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা দরে।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে। ঈদের আগেও যে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি।

হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, কয়েকদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর কমতে শুরু করেছে কাঁচামরিচের ঝাঁজ। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে কাঁচামরিচের দাম কমেছে কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। এক দিন আগে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দরের কাঁচামরিচ আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরের সাতজন আমদানিকারক ৩ হাজার টন কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছে। সোমবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হবে। তিনি বলেন, ঈদের আগে বন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ২৭ টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়। যা আমরা বন্দরে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। এদিকে, রপ্তানি শুরু হওয়ায় ভারতের বাজারেই কাঁচামরিচের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পূর্বে যে কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১১০ রুপিতে আমদানি করেছিলাম বর্তমানে তা বেড়ে ১৪০ রুপি পড়ছে। তাতে পরিবহন খরচ ও আমদানি শুল্ক মিলিয়ে ২৪০ টাকা পড়বে। যার কারণে ২৫০ টাকার নিচে বিক্রি সম্ভব নয়।  

 

 

সর্বশেষ খবর