মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ

যুদ্ধেও বেড়েছে পণ্য রপ্তানি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ-আমেরিকায় চাহিদা কমার পরও আগের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে দেশের পণ্য খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে অর্জিত আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি মার্কিন ডলারে। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২০৮ কোটি মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৪৭ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় বেড়েছে এবার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের পণ্য খাতের রপ্তানি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়লেও সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা অর্জন হয়নি। প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য পণ্য খাতে ৫৮ হাজার মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২৪৫ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি কম হয়েছে এবার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পরও রপ্তানি আয় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে আছে এটিই আমাদের কাছে ভালো খবর।’ তিনি বলেন, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। যুদ্ধের কারণে এসব দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় চাহিদা কমেছে। এ কারণে সেখানে প্রত্যাশিত রপ্তানি অর্জিত হয়নি।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বলেন, ভারত, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোয় পণ্য রপ্তানি বেড়েছে, যা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহায়তা করেছে।

সবচেয়ে বেশি আয় পোশাক খাতে : বরাবরের মতো সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরেও সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। নিট ও ওভেন গার্মেন্টস থেকে এবার অর্জিত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে নিট গার্মেন্ট থেকে ২ হাজার ৫৭৩ কোটি মার্কিন ডলার এবং ওভেন গার্মেন্ট থেকে ২ হাজার ১২৫ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে। আগের অর্থবছরে নিট ও ওভেন মিলিয়ে সামগ্রিক তৈরি পোশাক খাতে অর্জিত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে।

নিট তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে অস্থিরতার পরও দেশের রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এটি সামনের দিনগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করবে। পোশাক খাতের বাইরেও বেশ কয়েকটি পণ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে। এর মধ্যে চামড়া ছাড়া জুতা থেকে ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার, ক্যাপ ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার, চামড়াজাত পণ্য ৪০ কোটি মার্কিন ডলার, কাগজ ও কাগজপণ্য ২৩ কোটি মার্কিন ডলার এবং প্লাস্টিক দ্রব্য থেকে ২১ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে। অন্যদিকে আগের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে হোম টেক্সটাইল, চামড়ার জুতা, চিংড়ি, ওষুধ, শুকনো খাবার, জুট ইয়ার্নস, বাইসাইকেল, কাঁচা পাট ইত্যাদি। এর মধ্যে হোম টেক্সটাইল থেকে ১০৯ কোটি ডলার, চামড়ার জুতা ৭০ কোটি ডলার, জুট ইয়ার্নস ৫০ কোটি ডলার, চিংড়ি ৩০ কোটি ডলার, কাঁচা পাট ২০ কোটি ডলার, ওষুধ ১৭ কোটি ডলার এবং বাইসাইকেল থেকে ১৪ কোটি ডলার রপ্তানি আয় এসেছে।

সর্বশেষ খবর