বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংস্কৃতি বিশ্ব অঙ্গনে তুলে ধরতে পদক্ষেপ নেবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংস্কৃতি বিশ্ব অঙ্গনে তুলে ধরতে পদক্ষেপ নেবে সরকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ব পরিমন্ডলে প্রতিষ্ঠিত করতে পদক্ষেপ নেবে তাঁর সরকার। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিকাশে নেবে জোরালো উদ্যোগ, যাতে নতুন প্রজন্ম তাদের সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ভুলে না যায়।

গতকাল রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং একটি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় এ অনুষ্ঠানে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।

প্রধানমন্ত্রী যে ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হলো : গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের জন্য নতুন বহুতল ভবন, পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন, ঢাকায় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ভবন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমি এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং জাতীয় জাদুঘরে শিশু গ্রন্থাগার। প্রধানমন্ত্রী এ সময় কপিরাইট ভবনের নবনির্মিত ১২ তলা ভবনটিও উদ্বোধন করেন। গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের জন্য নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আধুনিক প্রযুক্তিতে এটি নির্মাণের জন্য ৫২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে সরকার অনেক আগেই প্রকল্পটি অনুমোদন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে স্মৃতিবিজড়িত পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি এমনভাবে মেরামত ও সংরক্ষণ করতে হবে যাতে এর স্বকীয়তার কোনো পরিবর্তন না হয়। সরকারিভাবে কেনা বাড়িটির কাগজপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাড়িটি সংস্কারের প্রয়োজনে তিনি যে কোনো নির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। শেখ হাসিনা বলেন, নগর ভবনে (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যালয়) যে ঢাকা গ্রন্থাগারটি রয়েছে, তা রোজ গার্ডেনে স্থানান্তর করা হবে। শিশু গ্রন্থাগার সম্পর্কে তিনি বলেন, জাপান আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমাদের উন্নয়নে তারা বিরাট ভূমিকা রেখেছে। জাপানের সহযোগিতায় তাদের নিজস্ব নকশা অনুযায়ী জাতীয় জাদুঘরে শিশু গ্রন্থাগার স্থাপন করা হবে। গ্রন্থাগারে দেওয়া হবে ৬ হাজার জাপানি বই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থসামাজিক অগ্রগতির দিকে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি তেমনিভাবে সাংস্কৃতিকভাবেও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি যেন বিশ্ব অঙ্গনে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, তাঁর সরকার সংস্কৃতির আরও উন্নতির জন্য প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবে আমাদের বাচ্চাদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসগুলো সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে। তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ী আমাদের সংস্কৃতিকে উন্নত করতে হবে যাতে তারা কখনোই বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ভুলে না যায়। তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতির উন্নতি ও বিকাশের জন্য অতীতের মতো প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সে বিষয়ে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তাঁর সরকার ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশি সংস্কৃতির উন্নয়নে গত সাড়ে ১৪ বছরে আরও ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৪১টি প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি কোনো দেশকে ধ্বংস করতে চায় তাহলে তার সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করবে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিকভাবে ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল। এজন্যই নিশ্চিত পরাজয় জেনে মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাহিত্য ও গবেষণামূলক কাজকে রক্ষা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে কাজ করছে। তিনি বলেন, বিশ্ব এখন প্রযুক্তি দ্বারা আঁকড়ে আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তুলতে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গেও প্রযুক্তিকে যুক্ত করতে হবে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। দেশব্যাপী ওয়াইফাই সংযোগ আছে। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও মানুষের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের অনেক লুকানো প্রতিভা আছে। তাদের প্রচারের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়েও মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা জেলা ও উপজেলা পর্যায় ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়েও নিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদারমনা হবে এই কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা এবং চেতনাকে আরও বিকাশের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর