বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ এখন আর হাত পাতে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ এখন আর হাত পাতে না : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ এখন আর উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছে ‘হাত পাতে না’, বরং প্রয়োজনে ঋণ করে এবং সুদসহ তা ফেরত দেয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। সেটা আমি করতে সক্ষম হয়েছি। এই একটা সিদ্ধান্ত আমি মনে করি, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আগে যারা মনে করত, এই দেশ শুধু হাত পেতে চলবে, তারাও কিন্তু এখন সেটি মনে করে না। বরং আমরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিই। আমরা কারও কাছ থেকে হাত পেতে নিই না। আবার তা সুদসহ ফেরতও দিই। তিনি বলেন, আগে কিন্তু ভাবখানা এমন ছিল যে আমরা ভিক্ষা নিচ্ছি। এই যে শর্ত দেওয়া, তবে পদ্মা সেতুর ওই সিদ্ধান্তের পর অতটা কেউ শর্তটর্ত দিতে সাহস পায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশকে যাতে আর কারও কাছে হাত পাততে না হয় সেই ব্যবস্থা সরকার করেছে। তিনি বলেন, ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। বাংলাদেশ আর কারও কাছে হাত পেতে চলবে না, সেইভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলেছি। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ অনেক পাল্টে গেছে। আজকে দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। অতিদরিদ্র ২৫ ভাগ থেকে ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। দেশে কোনো ‘হতদরিদ্র থাকবে না’ এমন প্রত্যয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, প্রত্যেকটি মানুষ বাসস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট জনশক্তি, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট জনগণ সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। দেশের প্রতিটি বাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে জানিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরতদের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শুধু দেশে নয়, শান্তিরক্ষা মিশনে যারা কাজ করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুণ হলো- তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে। এ জন্য তারা প্রত্যেকের কাছে খুব মর্যাদা পায় এবং আমি খুব গর্ব করে বলি, যে দেশে আমাদের বাহিনীর সদস্যরা কাজ করেছে, সে দেশের সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের বাহিনীর প্রশংসা করেন। তখন সত্যি আমার বুক গর্বে ভরে যায়। আমরা এতে যে সম্মান পাচ্ছি সেটা ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পিজিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় এসে গার্ড সদস্যদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে গার্ড ভাতা প্রচলন করে। রেজিমেন্টের প্রতিটি সদস্যকে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

মেধার পাচার রোধ দুরূহ : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সত্যিকার অর্থে মেধা পাচার রোধ দুরূহ ব্যাপার উল্লেখ করে বলেছেন, স্বল্পোন্নত/উন্নয়নশীল সব দেশ থেকেই মেধা পাচার হয়ে থাকে। মেধাবী ও দক্ষ জনশক্তি যাতে দেশত্যাগ করে বিদেশকে স্থায়ীভাবে বেছে না নেয়, সে লক্ষ্যে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের মেধা পাচার নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে।

গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের কারণে মেধাবীরা দেশেই এখন কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সব সেক্টরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের মেধা পাচার অনেকটাই রোধ হচ্ছে। স্ব স্ব ক্ষেত্রে মেধাবীদের মূল্যায়নে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে। সংসদ নেতা বলেন, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ, মেধাবীদের বৃত্তি/উপবৃত্তি প্রদান, সব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধার প্রাধান্য, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি, রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশিষ্ট ও মেধাবীদের বিভিন্ন পদক-পুরস্কার ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার কর্তৃক মেধাবীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের দ্রুত বিকশিত ও আধুনিকায়নভিত্তিক উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে মেধা পাচার রোধ গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মেধাবী, দক্ষ ও উদ্ভাবনী প্রতিভা সাধারণত কাক্সিক্ষত সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামোগত পরিবেশের অভাবে ভিনদেশে স্থানান্তর হয়। ফলে দেশের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান, পরিবেশ, বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা, লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ ও নাগিরকত্বসহ স্থায়ী বসবাসের সুযোগ হলো মেধা পাচারের অন্যতম কারণ। সরকার এ বিষয়ে সচেতন এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মেধা পাচার রোধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

দেড় কোটি কর্মী বিদেশে কর্মরত : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও দায়িত্বশীল শ্রম অভিবাসন নিশ্চিতকরণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। বর্তমানে বিশ্বে ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের অধিক কর্মী কর্মরত আছেন।

সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ : সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, এর জন্য একোয়ান্টিক ডপলার কারেন্ট প্রোফাইলার (এডিসিপি) যন্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একোয়ান্টিক ডপলার কারেন্ট প্রোফাইলার (এডিসিপি) যন্ত্র সংগ্রহ করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকার স্রোত ও ঢেউ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম ম্যাপিং করা হচ্ছে। ব্লু ইকোনমির অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ২০১৮ সাল থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার সামুদ্রিক পরিবেশ তথা ওয়াটার কোয়ালিটি, সেডিমেন্ট প্রবাহ, পানির তাপমাত্রা, চাপ, লবণাক্ততা, নিউট্রিয়েন্ট, ক্লোরোফিল, ডিজলভ অক্সিজেন, সিওডি, বিওডি, টার্নিডিটি, এসিডিফিকেশন ইত্যাদি ডাটা নিয়মিত সংগ্রহ করছে। ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে কুতুবদিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় সমুদ্র এলাকার ব্লু কার্বন পরিমাপ এবং নাফ মোহনা, রেজু খাল মোহনা ও মহেশখালী চ্যানেলের মোহনা অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ এলাকায় ব্লু কার্বন স্টক পরিমাপ করেছে।

শেখ হাসিনাকে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর ফোন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ আহমদ নওবাব আল আহমদ। গতকাল শেখ আহমদ নওবাব আল আহমদ ফোন করে বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, নেতৃদ্বয় দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সময়ের সঙ্গে তা গভীর ও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

এ সময় টেলিফোন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং কুয়েতের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানান।

সর্বশেষ খবর