শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাত কোটির টার্মিনাল পড়ে আছে ১৯ বছর

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সাত কোটির টার্মিনাল পড়ে আছে ১৯ বছর

রাজশাহীর নওদাপাড়ায় আন্তজেলা বাস টার্মিনাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহীর নওদাপাড়ায় ১৯ বছর আগে প্রায় সোয়া ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। কিন্তু এখনো সেটি ব্যবহার হচ্ছে না। কয়েক দফায় সময় নিয়েও বাস মালিক ও শ্রমিকরা শিরোইল থেকে টার্মিনাল স্থানান্তর করেননি। ফলে ব্যস্ত সড়কে যানজট প্রকট হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তবে বাস মালিক-শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, টার্মিনালটির কিছু কাজ এখনো বাকি। তা ছাড়া ঢাকাগামী বাসগুলোর কাউন্টার বরাদ্দ না দিয়ে সাধারণ মানুষকে দোকান বা অন্য কাজে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরীর যানজট নিরসন ও উন্নত পরিবহন সেবা নিশ্চিতে ১৯ বছর আগে নির্মাণ করা হয় আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। নগরীর নওদাপাড়ায় ৭ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এ টার্মিনাল নির্মাণ করে। যেখানে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ বাস পার্কিংয়ের সক্ষমতা আছে। সেই সঙ্গে বাস চলাচলের সুবিধার্থে সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং থেকে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় হয় ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও বাস কাউন্টারগুলো নিয়ে যাওয়া যায়নি টার্মিনালে। নগরীর তালাইমারী, ভদ্রা, রেলস্টেশন, রেলগেট, গ্রেটার রোডসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। এতে রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

ভোগান্তি দূর করতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে সভা হয়। এতে বিভিন্ন পক্ষের প্রধান ও প্রতিনিধিদের সম্মতিতে শিরোইল থেকে সব বাস নওদাপাড়ায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছরের ১ নভেম্বর থেকে নওদাপাড়া আন্তজেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সব রুটের বাস চলাচলের কথা থাকলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক রাজশাহী রেলগেট থেকে ভদ্রা মোড়। রেলগেট থেকে শুভ পেট্রল পাম্প পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় সারিসারি বাস। আবার ঢাকা টার্মিনাল থেকে দোসর মন্ডলের মোড় পর্যন্ত ঢাকাগামী কোচে দখল করে আছে রাস্তার দুই পাশ। রাস্তার এক পাশেই কাউন্টার হওয়ায় রাস্তা দখল করে বাসে যাত্রী ওঠানো-নামানো করানো হয়। মাত্র কয়েক গজ দূরত্বে মহানগর আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থাকলেও তা ব্যবহার করছে না বাস মালিক সমিতি।

বাসশ্রমিকরা বলেন, বাস টার্মিনালের পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে যায়। গাড়ি আটকে যাবে। শুধু তাই নয়, যদি রাতে সেখানে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। শরিফুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের টার্মিনালে যেতে কোনো বাধা নেই। তবে আগে টার্মিনাল ঠিক হতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।’ বাস মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, টার্মিনালে বাস কাউন্টারগুলোয় শাটারিং, বাস রাখার জন্য মার্কিং, গাড়ি ধোয়ার জন্য ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। তা ছাড়া ঢাকাগামী বাসের জন্য এখনো কাউন্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সেখানে সাধারণ মানুষকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। যেগুলো দোকান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, টার্মিনালে কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঢাকাগামী কাউন্টারগুলো এখনো বরাদ্দ না দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভাড়া দিয়েছে আরডিএ। পরিবেশ ও মান উন্নয়ন সবকিছু ঠিক করা হলেই গাড়িগুলো সেখানে চলে যাবে। এ বিষয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর