শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাহুলের আবেদন গুজরাট হাই কোর্টে নাকচ

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

রাহুলের আবেদন গুজরাট হাই কোর্টে নাকচ

ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী নিম্ন আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে তার সংসদ (লোকসভা) সদস্যপদ বাতিলের বিরুদ্ধে গুজরাট হাই কোর্টে যে আবেদন করেছিলেন ওই হাই কোর্ট গতকাল তা খারিজ করে দিয়েছেন।

এর ফলে তার ‘সদস্যপদ বিলোপ’ করার রায় বহাল থেকে গেল। এ ছাড়া শুক্রবারের রায়ের কারণে রাহুলের সামনে তৈরি হলো জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা। গত ২৩ মার্চ গুজরাটের সুরাট শহরের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রাহুলকে ‘অপরাধমূলক মানহানির’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে যে রায় দিয়েছিলেন, সুরাটের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক আরপি মোগেরা যে রায় বহাল রেখেছিলেন, শুক্রবার তাতেই সায় দিলেন গুজরাট হাই কোর্ট। ‘অপরাধমূলক অবমাননা’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাহুলের দুই বছর জেলের যে সাজা সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দিয়েছিলেন, তার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাহুলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাই কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছক। বিচারপতি প্রচ্ছক রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, ‘নিম্ন আদালত রাহুল গান্ধীকে সাজার যে রায় দিয়েছেন, তা সঠিক।’ রাহুল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড়ে থেকে। হাই কোর্টের রায়ের কারণে রাহুল সেই সংসদ সদস্যপদ ফিরে পাচ্ছেন না। সংশয় তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন কি না। সেই সঙ্গে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। হাই কোর্টের রায়ের পরে বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনেওয়ালা টুইট করে বলেন, ‘সত্যমেব জয়তে’। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরযেওয়ালা বলেন, ‘বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে।’ জাতীয় কংগ্রেস এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় কর্ণাটকের কোলারে জনসভায় বক্তৃতাকালে মোদির পদবি প্রসঙ্গে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে গত ২৩ মার্চ সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচ এইচ বর্মা দুই বছর জেলের সাজা দিয়েছিলেন রাহুলকে। লোকসভা ভোটের সময়ে প্রচারে ‘মোদি’ নামযুক্ত বেশ কয়েক ব্যক্তির দুর্নীতির বর্ণনা দিয়ে বলেছিলেন ‘বুঝি না, সব চোরের নাম মোদি হয় কেন?’ তবে ‘অপরাধমূলক মানহানি’ মামলায় দোষী রাহুলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের জন্য তাঁকে ৩০ দিন সময় দিয়েছিলেন বিচারক। সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ২৪ মার্চ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮(৩) নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের লোকসভা সদস্যপদ বাতিল করেছিলেন। এরপর রাহুল তাঁকে দোষী ঘোষণা করার বিরুদ্ধে এবং তাঁকে দেওয়া সাজার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ৩ এপ্রিল সুরাটেরই দায়রা আদালতে (সেশনস কোর্ট) আবেদন করেন। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল অতিরিক্ত দায়রা বিচারক আরপি মোগেরা সেই আবেদন নাকচ করে সাজা কার্যকরের রায় বহাল রাখেন। প্রসঙ্গত, বিচারক মোগেরা এক সময় একাধিক ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতা (বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অমিত শাহের আইনজীবী ছিলেন। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে রাহুলের আইনজীবী বিএম মঙ্গুকিয়া সুরাট দায়রা আদালতের সাজা কার্যকর করার নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। বিচারপতি গীতা গোপীর বেঞ্চে সেই আবেদন শুনানির জন্য নথিভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎই মামলার শুনানি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন বিচারপতি গোপী। মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর জন্য হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেন তিনি। এরপর মামলা যায় বিচারপতি প্রচ্ছকের বেঞ্চে। প্রাথমিক শুনানির পর সাজাপ্রাপ্ত রাহুলের অন্তর্র্বর্তীকালীন জামিন বহাল রেখেছিলেন বিচারক। তবে রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। শুক্রবার বিচারপতি সাজা কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় রাহুলকে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে বলে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।

সর্বশেষ খবর