রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন

বিদেশিদের কাছে দেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা বেখাপ্পা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, কিছু সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, তাদের ছেলেমেয়েরা আমেরিকায় পড়তে যায় এবং তারা সেখানে বাড়ি কেনে। মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। গতকাল ‘ডিক্যাব টক’ নামক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক না এলেও আমরা পরোয়া করি না। এ ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের কাছে প্রশ্ন করা বেখাপ্পা দেখায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন ভিসানীতি  নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ভিসানীতি তারা প্রণয়ন করেছে এবং সেটি তাদের মাথা ব্যথা। আমাদের কর্মী, পোলিং এজেন্ট তাদেরও কোনো উদ্বেগ নেই আমেরিকা যাওয়ার জন্য এবং তারা কখনো আবেদনও করে না। যারা এসব নিয়ে চিন্তিত তারা হলেন কিছু সরকারি কর্মচারী, কিছু ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের কিছু নেতা ও এনজিও নেতা। তারা সেখানে যান এবং টাকা নিয়ে আসেন। তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়ে এবং সেখানে বাড়ি করেছে। ওরা একটু দুশ্চিন্তায় আছে। বিদেশি পর্যবেক্ষক ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুনিয়ার বড় বড় দেশে নির্বাচন দেখার জন্য কোনো পর্যবেক্ষক যায় না। আমাদের দেশে পর্যবেক্ষক এলো কি এলো না, এতে কিছু যায় আসে? বিদেশি পর্যবেক্ষক যদি আসতে চায়, তবে আমাদের আপত্তি নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক এলে ভালো, কিন্তু না এলে আমরা পরোয়া করি না। পর্যবেক্ষক না এলে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বিদেশিদের এনে এনে নির্বাচন দেখানোর। আমার মতে, এটি ভবিষ্যতে বন্ধ করা দরকার। আমাদের দেশে অনেক বাড়ন্তি কাজ হচ্ছে এবং এটি বন্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আমেরিকায় কেউ সংলাপ করে? যুক্তরাষ্ট্রে কেউ পদত্যাগ করে? যুক্তরাজ্যে কেউ করে? আমেরিকায় নির্বাচনে ২৫-৩০ শতাংশ লোক ভোট দেয়। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক লোক ভোট দেয়। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আশা করি আগামীতে মডেল ইলেকশন হবে। তবে আমাদের দেশে সন্ত্রাসী দল থাকতে পারে। সন্ত্রাসী দল ইলেকশনে না এলে কোনো সমস্যা নেই। বিদেশি প্রতিনিধি দলের আসন্ন ঢাকা সফর নিয়ে ড. মোমেন বলেন, দেশে বিদেশি কেউ এলে স্বাগত। তবে অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। আমাদের ইলেকশন প্রসেস কেউ যেন ধ্বংস না করে, সেটা দেখতে হবে। আমরা নিজেদের তাগিদেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব- আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাসী। দ্রুত উন্নয়নের কারণে আমরা অনেকের চক্ষুশূল হয়ে গেছি মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, গুম এগুলো সব ভাঁওতাবাজি। বিভিন্ন দেশেই মানুষ হারিয়ে যায়, আবার ফিরে আসে। তারা বলে আমাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হয়। অথচ আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখে না। তিনি বলেন, আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এত মানুষ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য জীবন দেয়নি। বিদেশিদের এটা জানা উচিত। তিনি আরও বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা দেশে আসেন দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে। কিন্তু অনেক সময় তারা এমন সব কথা বলেন, যা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল। বিদেশিদের কাছে গিয়ে দেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা বেখাপ্পা দেখায় উল্লেখ করে আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এমপি ও মন্ত্রী বানিয়েছেন। আমি আগে রাষ্ট্রদূত ছিলাম। কিন্তু কোনো দেশে তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে প্রশ্ন করেনি। বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূতের এসব কাজ নয়। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ডিকাব টক অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিকাব প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।

সর্বশেষ খবর