সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জেয়া লুর কী বার্তা দিল্লিতে

কাল আসছেন ঢাকায়, বাংলাদেশে আলোচনায় চার ইস্যু

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জেয়া লুর কী বার্তা দিল্লিতে

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সরগরম কূটনৈতিক অঙ্গনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, বেসামরিক নিরাপত্তা ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু গতকাল নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। আগামীকাল তারা ঢাকা সফর শুরু করবেন। বাংলাদেশ সফরের আগে তাদের দিল্লি সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গনে। সূত্রের খবর, দিল্লিতে উজরা জেয়া ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ বিষয়ক কূটনীতিকদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ আলোচিত হতে পারে। কারণ, এ বৈঠক উপলক্ষে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা ইতোমধ্যেই দিল্লিতে গিয়ে তার মতামত দিয়েছেন। হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উজরা জেয়া-লু এর নয়াদিল্লির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও থাকবেন বলে সূত্রের খবর। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, নয়াদিল্লিতে এ বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অবস্থানের একটি দিক-নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের খবর, বাংলাদেশে চার দিনের সফরে উজরা জেয়া ও লু মূলত চারটি ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা করবেন। এর মধ্যে রয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যু। এর বাইরে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। তাছাড়া আলোচনায় থাকবে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যু। সূত্র জানান, ঢাকা সফরে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেই সঙ্গে নিহত শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম ইস্যুতে তার সহকর্মী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন তারা। সফরের দ্বিতীয় দিন ১২ জুলাই তারা সকালে চলে যাবেন কক্সবাজারে। দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতার বাইরে নিউট্রিশন সেন্টার, কালচারাল মেমোরি সেন্টার ঘুরে দেখবেন ও কক্সবাজারে কর্মরত প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিকালে ঢাকা ফিরবেন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। কক্সবাজার সফরে তাদের সঙ্গে থাকবেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়ে।

এর আগে উজরা জেয়া সফর ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, আন্ডার সেক্রেটারি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রম সমস্যা, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবিক উদ্বেগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশে ভ্রমণের উদ্দেশ্য আরও মুক্ত, উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অবদান এবং সমগ্র অঞ্চলজুড়ে উদ্বাস্তু ও স্বাগতিক সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক সহায়তা জোরদার করা। বাংলাদেশে সফরের প্রস্তুতি হিসেবে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে দেখা করেন উজরা জেয়া।  এ সাক্ষাতের পর এক টুইটে জেয়া বলেছেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায্য শ্রমচর্চা এবং মানবিক সহযোগিতার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানকে ধন্যবাদ। আমাদের আরও শক্তিশালী ও গভীর অংশীদারত্বের জন্য আমি উন্মুখ হয়ে আছি। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, জেয়া তুলনামূলকভাবে একজন উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা এবং তার এলাকাও বেশ বিস্তৃত। উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আলোচনায় আসতে পারে। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তা উজরা জেয়া মূলত বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সর্বজনীন মানবাধিকারের অগ্রগতি, উদ্বাস্তু ও মানবিক ত্রাণকে সমর্থন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মাদকবিরোধী সহযোগিতা, দুর্নীতি ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই, সশস্ত্র সংঘাত প্রতিরোধ ও মানব পাচার দূর করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর আগে তার সমমানের কর্মকর্তা মার্কিন রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড গত বছরের ১৯-২৩ মার্চ ঢাকা সফরে এসেছিলেন।  অন্যদিকে,  যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিষয়ের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। এ অঞ্চলের দেশগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে রয়েছে। ডোনাল্ড লু চলতি বছরের জানুয়ারিতে সর্বশেষ ঢাকায় এসেছিলেন। পরে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির পর এ নীতির সরাসরি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ, যেটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি রাখে।’

সর্বশেষ খবর