সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি কেউ থামাতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি কেউ থামাতে পারবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক সময় আমরাও চাঁদে যাব, অ্যারোপ্লেন বানাব। সেই চিন্তা মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়টা বানিয়েছি, এমনকি অ্যারোনটিক্যাল সেন্টারও করে দিয়েছি। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি কেউ থামাতে পারবে না।

গতকাল সকালে নিজ কার্যালয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৩-২৪’-এর নির্বাচিত ফেলোদের পুরস্কার তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন।

অনুষ্ঠানে ৪৮ জন শিক্ষার্থীর হাতে ফেলোশিপ তুলে দেওয়া হয়। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ডিগ্রি অর্জনের জন্য ৩৮ জনকে মাস্টার্স ও ১০ জনকে পিএইচডি ফেলোশিপ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে ও আজকের তরুণরাই হবে স্মার্ট দেশ গড়ার সৈনিক। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসবে, সে জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। পৃথিবীর সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, কোনোমতে পিছিয়ে থাকব না, এটাই আমাদের লক্ষ্য। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা কখনোই অন্যের মডেলের ওপর নির্ভর করব না। দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে আমরা নিজস্ব মেধা ও চিন্তার প্রয়োগ ঘটাব। তিনি বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, প্রাকৃতিক পরিবেশ, দেশবাসীর মানসিকতা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যে ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামী-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করছি। অর্থের দিকে না ছুটে জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ধন সম্পদ কাজে আসবে না, একটা জিনিস কাজে আসবে সেটা হচ্ছে শিক্ষা। আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা পড়া শেষ করতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে আমাদের বাবা বারবার জেলে গেছেন, আমাদেরও পড়ার ব্যাঘাত ঘটেছে। ১৯৭৫ সালে আমি মাস্টার্সে পড়ছি, রেহানা তখন গার্লস কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ে, তাকে আমি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম লন্ডনে, ফিরতে পারলাম না। পড়াশোনা শেষ করতে পারলাম না। এরপর অনেক অনারারি ডিগ্রি পেয়েছি, সেটা তো আর মূল পড়াশোনা না। ফেলোদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছি। ফিরে এসে তারা দেশকে কী দেবে, কতটুকু দেবে বা দিতে পারবে সেই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৪ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ সব দিক দিয়ে এগিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তখন কী ছিল, এখন পর্যন্ত কী পরিবর্তন এসেছে, শিক্ষা-দীক্ষায় কী করতে পেরেছি দেখুন। পেরেছি এই কারণে যে, নিজের দেশটাকে জানতে হবে, অনুভব করতে হয়। প্রকৃতির কাছ থেকেও জানতে হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে জানাটা দিয়ে উন্নয়ন করলে তা গণমুখী হবে, মানুষের জন্য কিছু হবে।  শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতিটি খাতে উন্নয়নের জন্য সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সঠিক পরিকল্পনা যে দেশকে সার্বিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে তা গত সাড়ে ১৪ বছরে তাঁরা প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, এসব ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী, কারণ তারা বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। আমি আমাদের ছেলেমেয়েদের বলতে চাই যে- তোমরা প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি সুযোগকে কাজে লাগাও। বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই। আমরা পিছিয়ে পড়তে চাই না। মেধাবীদের দেশের মশালবাহক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমি মনে করি, মেধাবীরা তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাবেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য ফেলোশিপ প্রদানসহ সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

সর্বশেষ খবর