সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন আইএমএফের!

প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি জানতে চায় সংস্থাটি, আলোচনা সঞ্চয়পত্র নিয়েও

মানিক মুনতাসির

সরকারের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল সর্বস্তরের জনগণের জন্য একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা। সেটির বাস্তবায়ন করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে। কিন্তু এটি কতটা টেকসই হবে এবং এটার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। ঢাকা সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধি দল আজ এ বিষয়ে অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। সেখানে এই স্কিম বাস্তবায়নের একটি কর্মপরিল্পনা ও বিশদ বর্ণনা তুলে ধরা হবে। এদিকে আইএমএফের চাপে সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। অর্থাৎ মানুষ এ খাতে বিনিয়োগের চেয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে বেশি। যার ফলে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এ বিষয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, আইএমএফ চায় এই স্কিমে সরকার ও জনগণের অর্থায়ন এবং অংশগ্রহণ হতে হবে জোরালো। প্রাতিষ্ঠানিক মানুষদের এর আওতায় আনার পাশাপাাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষদেরও এ স্কিমে রাখা যেতে পারে। কল্যাণরাষ্ট্রের পথে এগোতে হলে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই স্কিমকে শক্তিশালী করা যেতে পারে বলে মনে করে আইএমএফ।

জানা গেছে, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী আগস্ট বা পরের মাসে তা চালু হতে পারে। আর এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আর্থিক খাতে ৩৮ ধরনের শর্ত দিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব শর্ত পরিপালন করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নেওয়া নানা সংস্কার কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে আইএমএফও সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের নেওয়া সংস্কার কর্মসূচিতে প্রথম কিস্তির টাকা ছাড় করেছে আইএমএফ। এখন দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড় করার বিষয়ে আইএমএফ তাদের শর্তগুলো সঠিকভাবে পরিপালন হচ্ছে কি না তা দেখছে। আগামী অক্টোবরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ কারিগরি মিশন বাংলাদেশ আর্থিক খাতের সংস্কারে ঠিক কতটা এগোলো তা পরখ করতে এখন ঢাকায়। এবার তাদের এই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ হয়েছেন বিশ্বব্যাংকের দুই সদস্য। প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আর্থিক খাতের সংস্কার পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে। এর অংশ হিসেবে আজ সোমবার অর্থবিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবে মিশন।

সূত্র জানিয়েছে, সর্বজনীন পেনশন ফান্ডে সরকার ও জনগণের অর্থায়ন এবং অংশগ্রহণ জোরালো করতে চায় আইএমএফ। জানা গেছে, পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। সংস্থাগুলো হচ্ছে- নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। এসব এমওইউর খসড়া তৈরি করে রাখা হয়েছে। পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্থবিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খানকে। তাঁর নেতৃত্বে এখন এমওইউগুলো হবে। সূত্রগুলো জানায়, পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে বিধিমালা জারি হওয়ার কিছু কাজ বাকি আছে এখনো। একটি বিধিমালা মাত্র জারি হয়েছে, যার নাম ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্যদের চাকরি বিধিমালা, ২০২৩’। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, পেনশন কর্মসূচিতে যোগদানের যোগ্যতা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধিমালা এবং জাতীয় পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বিধিমালা নামের আরও তিনটি বিধিমালার প্রজ্ঞাপন হবে শিগগিরই। আগে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দেওয়া হলেও সরকার পরে বয়সের বিষয়টি শিথিল করে ৫০ পার হওয়া ব্যক্তিদেরও পেনশনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরাও ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি এই চার শ্রেণির মানুষদের নিয়ে আপাতত পেনশন কর্মসূচি চালু হবে। এর আগে নির্ধারণ করা হবে তাঁদের সংজ্ঞা। মাসিক চাঁদা হতে পারে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন ও চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। প্রবাসী শ্রেণিতে কেউ বিদেশে থাকার সময় পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ওই প্রবাসী যদি মনে করেন তিনি আর বিদেশে যাবেন না; অর্থাৎ দেশেই থাকবেন, তখন কর্মসূচি পাল্টে যাবে।

সর্বশেষ খবর