মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞাসা

ইইউর অনুসন্ধানী মিশনের দিনভর বৈঠক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞাসা

বাংলাদেশের সফরের তৃতীয় দিন গতকাল দিনভর বৈঠক করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্বাচন বিষয়ক অনুসন্ধানী মিশনের ছয় সদস্য। সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দিন শুরু করা প্রতিনিধিরা একে একে দৃশ্যমান বৈঠক করেছেন মানবাধিকার কমিশন, পুলিশ সদর দফতর ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির সঙ্গে। এর মধ্যে মানবাধিকার কমিশনের কাছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা আছে কি না জানতে চেয়েছে ইইউ এর দলটি। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে অনুসন্ধানী মিশন ও পরবর্তীতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য কারিগরি সহায়তা নিয়ে। নির্বাচনের আগে ছয় সপ্তাহ পার্বত্য এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখার সুযোগও চেয়েছে তারা। আজ সকালে নির্বাচন কমিশন নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ইইউর এই মিশনের সদস্যদের।

জানা যায়, ইইউর প্রতিনিধিরা তাদের নেতা চেলেরি রিকার্ডোর নেতৃত্বে সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গিয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে তারা বৈঠক করেন। আধঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ বৈঠকে ছিলেন প্রতিনিধি দলের উপনেতা দিমিত্রি লোননোউ ও সদস্য আলভেস রামোস, মিলার ইয়ান জেমস, ক্রিস্টোফার ও মেরি হেলেন অ্যান্ডারলিন। পরে অতিরিক্ত সচিব আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তারা আমাদের কাছে সহায়তা চাচ্ছে। আমরা বলেছি, সব ধরনের সহায়তা দেব। তবে যেহেতু নির্বাচনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং তাদের থাকা, পরিদর্শন করা বা চলাচল করার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা আমরা দেব। আরেকজন জানতে চাচ্ছিলেন, ২০০৮ সালে তারা যখন এসেছিলেন তখন ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবারও পাবেন কিনা? আমরা বলেছি, ২০০৮ সালের চেয়েও ভালো এনজয় করবেন। তারা নির্বাচনের আগে ৬ সপ্তাহ পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, তারা নির্বাচনের সময়ে আসবে। আমরা বলেছি সেটি নির্বাচন কমিশন দেখবে। আর আমাদের দিক থেকে অনুরোধ করেছি, এটা যেহেতু বিশেষ তিনটি জেলা সেখানে কিছু নিরাপত্তার ইস্যু আছে। যদিও এখন আগের চেয়ে অনেক অনেক ভালো। আমরা তাদের ব্র্রিফ করেছি যে তিনটি জেলায় ২৬টি উপজেলা, ১২২টি ইউনিয়ন এবং প্রশাসনিক বিষয়ে। তিনি জানান, সরকারের আমন্ত্রণে তারা নির্বাচনের বিষয়ে অভজারভার হিসাবে এসেছে এটিই তাদের উদ্দেশ্য। তারা কবে ভিজিট করবে সেটি জানাননি। আমরা বলেছি, তারা আমাদের মেহমান সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতা আমরা করব। সেখানে তারা কী করবে না করবে সেটি দেখবে নির্বাচন কমিশন। আমরা তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছি, এখানে স্থানীয় প্রশাসন আছে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সেনাবাহিনী আছে, সুতরাং তারা যাতে নিরাপত্তার ইস্যুটি মাথায় রাখে সেটি বলেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইইউ প্রতিনিধি যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা আছে কি না, তা কমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কমিশনের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক দলকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। এছাড়া বৈঠকে সব ধরনের মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে কমিশনকে কোনো প্রশ্নও করা হয়নি। কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, আমার ধারণা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে পারে।

পরে দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন ইইউ প্রতিনিধিরা। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে বৈঠক করেন ইইউ প্রতিনিধিরা। প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠক সম্পর্কে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. মনজুর রহমান বলেন, তারা যে আসা-যাওয়া করবেন মূলত এই সংক্রান্ত তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

বিকালে গুলশানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের বাসায় ইইউ এর এই বিশেষ মিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যদের। বৈঠকে আওয়ামী লীগের চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর মো. জমির এবং উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। বৈঠকের পর শাম্মী আহমেদ বলেন, আসলে এটি ছিল একটি অনানুষ্ঠানিক বিষয়, পরিচিতিমূলক সাক্ষাতের মতো। আগামী ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে যেহেতু আমাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, সেখানে কিছু কথা হয়েছে। আমরা বলেছি তারা (ইইউ) চাইলে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে। জানা যায়, ১৫ জুলাই বিএনপির সঙ্গেও বৈঠক করবেন ইইউর অনুসন্ধানী মিশনের সদস্যরা।

 

 

সর্বশেষ খবর