শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসির ক্ষমতা বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসির ক্ষমতা বেড়েছে

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের ফলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা রহিত হয়নি, আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল আরপিও সংশোধন গেজেট প্রকাশের পর সার্বিক বিষয় নিয়ে নির্বাচন ভবনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন ভবনে সিইসির কক্ষের সামনে এ ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এক গুচ্ছ সংশোধন প্রস্তাব করে ইসি। ৪ জুলাই বিলটি সংসদে পাস হয়। সিইসি বলেন, ওই সংশোধনের ফলে ভোট শেষে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কিছু কেন্দ্রে ভোট বাতিল এবং গেজেট প্রকাশ আটকে দেওয়ার ক্ষমতা পেয়েছে ইসি। ওই সংশোধনের ফলে ভোট বন্ধে ইসির ক্ষমতা ‘খর্ব হয়েছে’ বলে যে বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসছে, তার কড়া সমালোচনা করেছেন সিইসি। তিনি বলেন, ভোট বন্ধে ইসির কোনো ক্ষমতা ‘রহিত হয়নি’, বরং আরপিও সংশোধন নিয়ে জনগণকে ‘বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, ইসিকে হেয় করা হচ্ছে’।

সিইসি বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাসে আইনটি নিয়ে নানা বক্তব্য এসেছে। তাতে জনগণ ‘বিভ্রান্ত হতে পারে’। যেসব ব্যাখ্যা, মন্তব্য এসেছে ‘তার সবগুলো সঠিক নয়’। ইসি বিষয়টি স্পষ্ট করতে চায়। ‘কমিশন ‘বুঝে না বুঝে নিজের পায়ে নিজে কুঠার মেরেছে’- এমন মন্তব্য এসেছে। বলা হয়েছে, গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল, ৯১এ দফায় সংশোধন হয়েছে। সরকার নিজের সুবিধার জন্য আইন সংশোধন করেছে- এমনও কথা হয়েছে। ‘এগুলো নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন। সরকার আরপিও সংশোধন আমাদের প্রস্তাব মতো করেছে। ইসি তার অবস্থানকে আরও সংহত, শক্তিশালী করার জন্য সংশোধনগুলো চেয়েছিল, সরকার সম্মত হয়েছে। সংসদ সম্মত হয়েছে। এতে আমাদের ক্ষমতা বর্ধিত হয়েছে।’

সমালোচকদের উদ্দেশে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আরপিও সংশোধন নিয়ে ‘অপব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে, এটা ‘দুঃখজনক’। ‘আমরা পুরো জাতি একটা সুন্দর নির্বাচন চাই। নির্বাচন নিয়ে অহেতুক, বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে ইসিকে হেয় করা বাঞ্ছনীয় নয়। কমিশনকে গঠনমূলক সাজেশন্স দিয়ে সহায়তা করলে আমরা উপকৃত হব।’

ভোট বন্ধে ইসির ক্ষমতা রহিত করা হয়নি দাবি করে সিইসি বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে আইন-কানুন, রুলিং অনুযায়ী। ‘ইলেকশনের’ পরিবর্তে যেহেতু ‘পোলিং’ এসেছে, এটা আপনাদের মতো আপনার বোঝেন; আমরা আমাদের মতো বুঝেছি। আপনারা যেভাবে বুঝেছেন, বুঝতে থাকেন। আমরা কী করতে পারব আমরা জানি। আপনারা চিন্তাভাবনা করতে থাকেন।’

৯১এ ৯১এএ নিয়ে সিইসির জবাব : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে নির্বাচনে বল প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যে কোনো ভোট কেন্দ্র বা ক্ষেত্রমত সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। এই ধারায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি দাবি করে সিইসি বলেন, ‘৯১এ ধারায় কোনো পরিবর্তন যদি হতো, তাহলে আমাদের ক্ষমতা হেরফের হতো। সেখানে কিছু করা হয়নি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা- যেখানে পোলিং পিরিয়ডে আমরা যে কোনো একটি, দুটি কেন্দ্র বা সমস্ত কন্সটিটিউয়েন্সির আমরা বাতিল করে দিতে পারব।

 

সে ক্ষমতা হুবহু আগের মতো রয়েছে

সংশোধনে নতুন দফা ৯১এএ সংযোজনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তার ফল সরকারিভাবে আমাদের কাছে পাঠানোর পরে ইসির গেজেট করা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। ‘সেখানে আমরা বলেছিলাম- কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু তারপরও কোনো কেন্দ্র বা কোনো কন্সটিটিউয়েন্সি নিয়ে বড় ধরনের অভিযোগ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কমিশন বিষয়টি তদন্ত করতে পারবে গেজেট উইথহেল্ড করে রেখে।’ ‘সেখানে সংসদ বলেছে- আমরা গেজেট উইথহেল্ড করতে পারব, সেক্ষেত্রে কন্সটিটিউয়েন্সির নির্বাচনটা বাতিল না করে যে যে কেন্দ্রে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয়েছে মনে করবে সেসব কেন্দ্রে ফলাফল বাতিল করতে পারবে-এতটুকু।’

সমালোচকদের একহাত : ৯১এ ধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের পরিবর্তে ‘পোলিং’ শব্দটি ব্যবহারে ভোটে ইসির ক্ষমতা কমেছে বলে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলে এসেছেন। তবে সিইসি দাবি করছেন, এটা ‘অপব্যাখ্যা’। সিইসি বলেন, আমরা তিনটি জায়গায় ‘ইলেকশন’ শব্দটাকে ‘পোলিং’ শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি। এটা হচ্ছে ক্লারিক্যাল কারেকশন।

তিনি বলেন, ‘পোলিং চলছে যখন তখন আমরা প্রয়োগ করব ৯১এ দিয়ে। ৯১এএ বিষয়টা আসবে যখন ভোট শেষ হয়ে যাবে, তারপরও যদি মনে করি, অতি বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো সেন্টারে ফলাফল স্থগিত রেখে তদন্ত করতে পারব।

ভোট শুরু হওয়ার আগে কমিশন ভোট বন্ধ করতে পারবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প হয়ে ৫০ লাখ লোক মারা গেল ধরুন, ইসির ইনহারেন্ট পাওয়ার আছে তাহলে পারবে না কেন? প্রয়োজন হলে পারবে না কেন?’ কমিশন চাইলেই যে কোনো সময় নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যমান আইনেই এটার সুযোগ রয়েছে।’

আরও যত সংশোধন : সিইসি বলেন, ৯১এএ ছাড়াও আরপিওতে আরও কিছু সংশোধন এনে ইসির ক্ষমতাকে ‘সুসংহত’ করা হয়েছে। গণমাধ্যকর্মী, পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিলে অপরাধ বিবেচনায় শাস্তির বিধান যোগ হয়েছে। ভোটে বাধা দিলে, ভোটারকে কেন্দ্রে আসার পথে বাধা দিলে, মনোনয়নপত্র জমায় বাধা ও প্রত্যাহারে চাপ দিলে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি তার ক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর