বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
নিরপেক্ষ ভোট চায় যুক্তরাষ্ট্র : জেয়া

ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধি দল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধি দল

বাংলাদেশে চার দিনের সফর শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। তাদের বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ভারত সফর শেষ করেই ঢাকা এলেন উজরা জেয়া। বাংলাদেশে আসার আগে নয়াদিল্লিতে উজরা জেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সফরসূচি অনুসারে, আজ দিনভর রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে কাটাবেন উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু। আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া নয়াদিল্লি ছাড়ার আগে দিল্লির হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকার কূটনৈতিক সম্পাদককে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের জন্য যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে সেটা অবাধ নির্বাচন করানোর জন্যই করা হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। সাক্ষাৎকারে উজরা জেয়া বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব আর্থিক উন্নতির প্রশংসা করেন। উজরা জেয়া বলেন, দিল্লিতে সফল আলোচনা শেষে আমি ঢাকা সফরে যাচ্ছি। আমি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য অপেক্ষা করছি। এর মধ্যে রয়েছে, মানবিকতার বিষয়ে সহযোগিতা ও নির্বাচন পদ্ধতি। আমরা আশা করছি বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধশালী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বহু দশকের উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব এবং শ্রম অধিকারের মতো স্পর্শকাতর বিষয় এবং সমাবেশের স্বাধীনতা বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের জন্য জরুরি। ভিসানীতি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার জন্য এটা প্রয়োজন। এটা প্রত্যেক গণতন্ত্রের জন্য প্রযোজ্য। সফরসূচি অনুসারে, উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু আজ সকালে চলে যাবেন কক্সবাজারে। দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতার বাইরে নিউট্রিশন সেন্টার, কালচারাল মেমোরি সেন্টার ঘুরে দেখবেন ও কক্সবাজারে কর্মরত প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিকালে ঢাকা ফিরবেন আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। কক্সবাজার সফরে তাদের সঙ্গে থাকবেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়ে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে সফরের তৃতীয় দিনে উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এদিন তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক মধ্যাহ্নভোজসভায় অংশ নেবেন। সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, মানব পাচার ও রোহিঙ্গা-সংকট, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা করবেন।

একক কোনো দল নয়, যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমর্থন করে- মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর : মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো একক রাজনৈতিক দলকে নয়, বরং প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল ওয়াশিংটনে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন ম্যাথু মিলার। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাওয়াকে রাশিয়া, চীন ও ইরান অন্য দেশের প্রতি হস্তক্ষেপ বলে সমালোচনা করেছে এমন প্রসঙ্গে ম্যাথু মিলার বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়ার জন্য কেউ সমালোচনা কেন করবে, এটা আসলেই আমি জানি না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্রেরও চাওয়া এটাই। মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না, প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। তিনি আরও বলেন, আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অন্য কোনো দেশ যখন কথা বলে তখন আমরা সেটিকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখি না। আমরা সেই আলোচনাকে স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রকে আরও সমৃদ্ধ করার পথে সুযোগ হিসেবে দেখি। আমরা আসলেই জানি না, অন্য কোনো দেশের এ বিষয়ে আপত্তি জানানোর কী আছে।

নির্বাচন ঘিরে মার্কিন দূতাবাসের সতর্কতা : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন দূতাবাস। গতকাল বিকালে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারি কিংবা এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য দেশজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ এবং অন্যান্য নির্বাচন-সম্পর্কিত কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভের মাত্রাও তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। এই অবস্থায় মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে পরামর্শ দেওয়া হয়। মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তায় বলা হয়, মনে রাখা উচিত- শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভগুলো সংঘর্ষ ও সহিংসতায় পরিণত হতে পারে। আপনাকে বিক্ষোভ এড়াতে হবে এবং কোনো বড় সমাবেশের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা ছাড়াও স্থানীয় ঘটনাসহ আশপাশের বিষয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে বার্তায়।

অস্ট্রেলিয়ারও সতর্কতা : আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে অস্ট্রেলিয়াও। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশন ভ্রমণ সতর্কবার্তায় বলেছে, আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিক্ষোভ, সমাবেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ড বাড়তে পারে। কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই এসব রাজনৈতিক কর্মকান্ড সহিংস হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে নাগরিকদের বিক্ষোভ, সমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতা জারি করে।

সর্বশেষ খবর