বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ফের রাজপথে মুখোমুখি

বাইরে থেকেও লোক আনবে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাইরে থেকেও লোক আনবে আওয়ামী লীগ

আজ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচি সফল করতে দলীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শান্তি সমাবেশে লাখো লোকের সমাবেশ ঘটাতে রাজধানীর পাশের এলাকার নেতা-কর্মীদেরও এতে যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে রাজধানীর পাড়ামহল্লায় সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীন দলটি। বিএনপি সমাবেশের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা তৈরির চেষ্টা করলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। এজন্য সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা দেবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ যৌথভাবে আজকের শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছে। সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ পৃথকভাবে বর্ধিত সভা ডেকে লোকসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল দুপুরে সর্বোচ্চ উপস্থিতির বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। গতকাল তেজগাঁওয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি বেনজির আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের পরিচালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দলের জাতীয় পরিষদের সদস্য বাতেন মিয়া প্রমুখ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন জানান, আজকের সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে।

রাজধানীতে দুই দলের এ দুই সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজনীতিতে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। গত বছর নভেম্বর থেকে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে। বিএনপি কর্মসূচি দিয়ে যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য তৈরি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে এবং আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবারও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি যেন সমাবেশ থেকে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারও যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসনিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপির সমাবেশের কর্মসূচি থেকে উসকানিমূলক কোনো কর্মকান্ড, সন্ত্রাস, নাশকতা তৈরির চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে আগে থেকেই তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সূত্রগুলো এও জানান, বিএনপির আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচিকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। কেননা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি আন্দোলনের চেষ্টা করছে, ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু কোনো আন্দোলনই দাঁড় করাতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি যে দাবি নিয়ে আন্দোলনের কথা বলছে, তাতে জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তাদের এক দফা আন্দোলনেও জনগণ সাড়া দেবে না। তবে এ আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকে বিএনপি অরাজনৈতিক পথ বেছে নিতে পারে, বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন তারা। নেতারা ভাবছেন বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতো সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে। এ কারণেই সরকার ও আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা দলগুলোর নেতাদের গতিবিধি খেয়াল রাখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হলে সঙ্গে সঙ্গে সরকার আইনি সব রকম ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান সূত্রগুলো। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি দিলে আমরাও রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করব। সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রশ্নই ওঠে না। এসব অযৌক্তিক দাবি নিয়ে বিএনপি যদি সন্ত্রাসের পথে হাঁটে, তাহলে সমুচিত জবাব পাবে।

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমরা কাউকে মাঠ দখলে নিতে দেব না, মাঠ ছেড়ে দেব না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির আস্ফালন আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। তাই শান্তিপ্রিয় জনগণকে নিয়ে আমরা শান্তি সমাবেশ করব।

রাজধানীর পাশের জেলা থেকেও আসবেন নেতা-কর্মী : ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ শান্তি সমাবেশ হলেও রাজধানীর পাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মী শান্তি সমাবেশে যোগ দেবেন। দলের কেন্দ্র থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা জেলা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ-সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেবেন।

দলের দায়িত্বশীল নেতারা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ১০-১২ হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকায় শান্তি সমাবেশে যোগ দেব।’

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বলেন, ‘নির্দেশনা আছে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শান্তি সমাবেশে যোগদান করার। সে কারণে বিশেষ বর্ধিত সভা করে সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর