শিরোনাম
বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের নিরাপত্তায় হুমকি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের নিরাপত্তায় হুমকি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই কেবল রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান সম্ভব। আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য হুমকি। আশা করি শিগগিরই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবে। গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জনস্বাস্থ্য ও কূটনীতি নিয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সদস্য দেশসমূহের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মিয়ানমারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. থেতখাইং উইন, ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী লিয়নপো দাশো দেচেন ওয়াংমো, মালদ্বীপের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সাফিয়া মোহাম্মদ সাইদ, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী বিজয়ভাত ইসরাভাকদি এবং বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. বরদান জং রানা বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এবং সূচনা বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে একটি অডিও ভিজুয়াল উপস্থাপনাও প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারির সময়ও আমরা এ দেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাইনি। তাদের নিয়মিত টিকা, পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, এ দেশে আশ্রিত বিশাল জনগোষ্ঠীটি আমাদের অঞ্চলের জন্য মানবিক সংকট তৈরি করছে এবং নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। কেবল সসম্মানে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনই এই সংকটের টেকসই সমাধান। আমি আশা করি মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করি। আরও আড়াই হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে এবং আমাদের স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। এতে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় এসে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করি। সে সময় সব মিলিয়ে সাড়ে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়। বর্তমানে সেগুলো থেকে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে পাঁচ প্রস্তাব : স্বাস্থ্য খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমত, ভবিষ্যৎ জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিরাময়যোগ্য সংক্রামক রোগ নির্মূল করতে ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে বিদ্যমান উত্তম চর্চা বিনিময়ে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে। তৃতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্যকে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল ধারায় যুক্ত করতে এবং পানিতে ডুবে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা বা প্রাণঘাতী বিপর্যয় রোধে আরও মনযোগী হতে হবে। চতুর্থত, আমাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্য শিক্ষা অবকাঠামোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পঞ্চমত, মা ও শিশু , কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট-৩ অর্জনের মাপকাঠি বিবেচনা করে এই অঞ্চলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আজ সময় এসেছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৩ ও অভীষ্ট-১৭-এর আলোকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করার। যে প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হবে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা। এই উদ্দেশ্য পূরণে সুস্পষ্ট বৈশ্বিক অঙ্গীকারের পাশাপাশি লক্ষ্য-অভিমুখী, নিবেদিত কূটনৈতিক তৎপরতার কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরকার প্রধান বলেন, কভিড-১৯ মহামারি প্রমাণ করেছে, আমরা যতই নিজেদের পরস্পর বিচ্ছিন্ন ভাবী না কেন, আমাদের সবার ভাগ্য আসলে একসূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আগামী ৭৫ বছর এবং তারও পরে যেন অর্থপূর্ণভাবে সমগ্র মানবতার সেবা করে যেতে পারে সে লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১১ সদস্য রাষ্ট্র হলো বাংলাদেশ, ভুটান, গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও তিমুর-লেস্তে।

সর্বশেষ খবর