বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
দিনে হাজার ছাড়াল রোগী

আক্রান্ত মৃত্যুর নতুন রেকর্ড ডেঙ্গুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আক্রান্ত মৃত্যুর নতুন রেকর্ড ডেঙ্গুর

ভয়াবহ ডেঙ্গু :- ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রতিদিনই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে গতকাল। ঢাকার হাসপাতালগুলোয় রোগী নিয়ে হিমশিম অবস্থা। জেলা উপজেলায়ও নাজুক পরিস্থিতি। বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে শিশুরা। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীদের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতেও। --ছবি : রোহেত রাজীব

ডেঙ্গুজ্বরে এক দিনে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৪ জন। এ বছর এটাই সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম পরিস্থিতিতে পড়েছে হাসপাতালগুলো।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২৮ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৪২৬ জন। বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৩০৬ জন। অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৯৭ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৮৯৭ জন, মারা গেছেন ৮৩ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ের ১১ দিনে মারা গেছেন ৩৬ জন। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। রাজধানীর সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালটি। গতকাল এ হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪৭৭ জন। শয্যা না থাকায় মেঝেতে রোগী রেখে চলছে চিকিৎসা। বেসরকারি হাসপাতালেও শয্যা সংকট। রোগী সামনে আরও বাড়তে থাকলে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল ভর্তি ছিলেন ২১৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৮৪ জন, শিশু হাসপাতালে ৪৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮২ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৮০ জনসহ রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১ হাজার ৩৩৭ জন। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৯৬৯ জন। ঢাকার বাইরে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানান, বগুড়ায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাফিজার রহমান (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, বুধবার হাফিজার রহমানের জ্বর আসে। তার উচ্চ রক্তচাপ ছিল। মৃত হাফিজারের দেহে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য ছিল না। হাফিজার রহমানের নাতি ঢাকার একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। ঈদের ছুটিতে সে জ্বর নিয়ে নানাবাড়ি আসে। জানা যায়, বগুড়ায় বর্তমানে তিনজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসমা বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায়।

 তিনি সোমবার পুরান ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে ওই রাতেই তিনি মারা যান। এ নিয়ে গত ১০ দিনে এই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফরহাদ হোসেন হীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগী উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার থেকে পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৭ জন রোগী।

লক্ষ্মীপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৩৬ জন রোগী। গতকাল সদরসহ জেলার পাঁচটি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে কয়েক দিন ধরে ১৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী জেলার রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফরিদপুরে গতকাল আরও ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৫ জন। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর