বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাজধানীতে শোডাউন পাল্টাপাল্টি এক দফা

সরকারের পদত্যাগ, একটাই দাবি আজ থেকে : ফখরুল

বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের পদত্যাগ, একটাই দাবি আজ থেকে : ফখরুল

নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলনের ‘এক দফা’ ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ থেকে আর কোনো দাবি নেই, দাবি একটাই সরকারের পদত্যাগ।

গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুগপৎ আন্দোলনের এক দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণার প্রাক্কালে ঢাকা মহানগর বিএনপির বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরাও নির্বাচন চাই। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন চাই।

সমাবেশে সরকার পতনের এক দফাসহ দুই দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। এক দফা আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, দেশ ও জনগণের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৮ জুলাই ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এবং পরদিন ১৯ জুলাই উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হবে। সমমনা দল ও জোটের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাদের দলীয় কার্যালয়, জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এক দফার এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা বরকতউল্লা বুলু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নুল আবেদীন, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, শামীমুর রহমান শামীম, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দল সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদল সভাপতি শেখ রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দেিণর আহবায়ক সুমন ভূইয়া ও সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ, ঢাকা মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, এম কফিল উদ্দিন আহমেদ, আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, অ্যাড. মকবুল হোসেন সরদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়ে না। কারণ, তারা ক্ষমতায় এসে এত বেশি লুটপাট করে, এত বেশি অত্যাচার করে- যার কারণে তারা জনধিকৃত হয়ে যায়। তাই তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আমরা চলমান সংকট সমাধানে সরকারকে অনেক সুযোগ দিয়েছি। আর কোনো সমাধান নেই, সমাধান একটিই- তা হলো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আর কোনো বিকল্প নেই। এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নজিরবিহীন শোডাউন করেছে বিএনপি। দুপুর ২টায় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হলেও গতকাল রাত থেকেই রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে আসতে থাকেন। ঢাকার বাইরে থেকেও স্বপ্রণোদিত হয়ে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা শুনতে আসেন অনেকে। সকাল ১০টার সময়ই পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে পুরো নয়াপল্টন ও তার আশপাশের এলাকা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তারা মুহুর্মূহু মিছিলে মুখর রাখেন পুরো এলাকা। একপর্যায়ে জনসভার বিস্তৃতি ঘটে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, শান্তিনগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিলসহ পশ্চিমে কাকরাইল হয়ে একেবারে মৎস্যভবন পর্যন্ত। জনসমুদ্রে পরিণত হয় নয়াপল্টনসহ আশপাশের সমগ্র এলাকা। ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখর করে তোলেন তারা। এদিকে সমাবেশ ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিলেন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা ব্যক্তি মির্জা ফখরুলের নয়, তরুণ প্রজন্মের তরুণ্যের নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ, যারা গণতন্ত্রের জন্য তাকিয়ে আছেন, তাদের জন্য ঘোষণা। বর্তমান সরকারের আমলে নেতা-কর্মীদের খুন-গুম, মামলা-হামলার শিকার হতে হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার আমাদের ছয় শতাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। শত শত মায়ের বুক খালি করেছে। সন্তানদের এতিম করেছে। সরকারের পেটোয়া বাহিনীর নির্যাতনে অনেকে পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। এমন অবস্থা থেকে আমাদের তরুণ-যুবকরা রুখে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের প্রত্যাশা- একটি নতুন বাংলাদেশ। তারা পরিবর্তন চান। তারা গুম হওয়া মানুষগুলো ফেরত চান। সরকারকে বলব- দিনে দিনে বাড়িতেছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ। বহু ঋণ হয়ে গেছে, সব শোধ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, চালের দাম এখন ৮০-৯০ টাকা। অথচ তারা (আওয়ামী লীগ) কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। চাকরি ঠিকই দিয়েছে, সেটা তাদের নিজেদের লোকদের। যদিও তাদের কাছ থেকেও ১০ লাখ, ১৫ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, কৃষকদের কথা দিয়েছিল- বিনামূল্যে সার দেবে। সেই সারের দাম এখন তিন-চার গুণ বেড়েছে। মধ্যবিত্তদের দেয়ালে পিঠে ঠেকে গেছে। অথচ মন্ত্রীরা বলেন, উন্নয়নশীল দেশে দাম তো বাড়বেই। সবাই ভালো আছে, খেয়েদেয়ে শুয়ে বসে ভালোই চলছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজার মুক্তি চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার শুধু দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নয়, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা সব ধ্বংস করেছে। ব্যাংকগুলো সব ফাঁকা হয়ে গেছে। দেশ থেকে টাকা নিয়ে আমেরিকায় রাখছিলেন, আমেরিকা যেই স্যাংশনস দিয়েছে, সেখান থেকে অন্য দেশে সরাচ্ছেন। সেই টাকা দেশে ফেরাতে আবার প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। কালো টাকা দেশে আনতেও প্রণোদনা দিতে হচ্ছে। সমাবেশে ‘রক্ত দিয়ে হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন’ বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেই কেবল নির্বাচন হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, রক্ত দিয়ে হলেও আমরা এবারের নির্বাচন প্রতিহত করব। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না। সেই কারণে আওয়ামী লীগের আজকের সমাবেশে মানুষ নেই। তিনি বলেন, গত ১৪-১৫ বছরে শেখ হাসিনা কোনো কথা শোনেননি। তাই ওনার এখন কোনো কথা বলারও দরকার নাই। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে যেতেই হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, আজকের সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে- আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর পর থেকে ১৭ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বরকতউল্লা বলেন, এ জন্য আপনাদের বিচার হবে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আপনাকে যেতেই হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে লুটপাটের রাজত্ব বানিয়েছে। এ সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যায় না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ রাজপথে নেমে এসেছেন। এই আন্দোলনের বিজয় ইনশা আল্লাহ সুনিশ্চিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর