বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জেয়া-লু শুনলেন রোহিঙ্গাদের কথা

আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

দিনভর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে কাটালেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি ঘুরে দেখে ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু। এ ছাড়া আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তারা। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক মধ্যাহ্নভোজসভায় অংশ নেবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। এসব আলোচনায় অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি আলোচনায় আসবে আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ।

জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি বুধবার টানা ৯ ঘণ্টা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন কক্সবাজারে। প্রতিনিধি দলটি বুধবার সকাল ৯টায় বিমান যোগে কক্সবাজার পৌঁছেন। এরপর যান উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখানে সকাল ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ছিলেন। ওখান থেকে প্রতিনিধি দলটি আসেন কক্সবাজার শহরে। যেখানে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার শহরে ফিরে বিকালে কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার থেকে বিমান যোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এসব পরিদর্শনকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তবে সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দলটি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় ত্যাগ করার পর কথা বলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ২০১৭ সাল থেকে এখানে আন্তর্জাতিক, দেশি-বিদেশি যে সব সংস্থা কাজ করেন তাদের অনেক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সহায়তা পান। বিশেষ করে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা যে খাদ্য সরবরাহ করে তাতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা রয়েছে। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। বৈঠকে প্রতিনিধি দলকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অবিহত করেছেন উল্লেখ করে মিজানুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত দুবার রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানো হয়েছে। প্রথমে ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার এবং ১ জুন থেকে ৮ ডলার করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর প্রতিনিধি দলটি সাহায্য ঘোষণার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি দেখেছেন। প্রতিনিধি দলটি ইউএনএইচসিআর- পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার, পুষ্টি কেন্দ্র, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। কথা বলেছেন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে।

দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি রোহিঙ্গাদের : কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ১১ নম্বর ক্যাম্পের কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে একদল রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠকে ১০ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রতিনিধি দলের কাছে দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আশ্রিত জীবন অনেকটা বন্দি জীবন। এমন জীবন চাই না, দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই। এ জন্য মিয়ানমারকে জোরালো চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান রোহিঙ্গারা। এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কাছে ক্যাম্পের শিক্ষাব্যবস্থা, খাদ্য, নিরাপত্তা বিষয়েও আলাপ করেছেন। বৈঠক শেষে আলাপকারী ১১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে ক্যাম্পে শিক্ষার ব্যবস্থা কম। অল্প লেখা পড়ার সুযোগ থাকলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই। নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না বলে জানানো হয়েছে। মো. ইউসুফ নামের এক রোহিঙ্গা জানান, প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত জানতে চেয়েছে। রোহিঙ্গারা দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মোহাম্মদ ইদ্রিস নামের এক রোহিঙ্গা জানান, প্রতিনিধি দলকে খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। খাদ্য সহায়তা যেন আগের মতো দেওয়া হয় এমন দাবিও জানানো হয়। ছৈয়দ নুর নামের এক রোহিঙ্গা জানান, আলাপকালে সংকট সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধি দলটি পরিদর্শনকালে তাদের পিছু নেন রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা। দীর্ঘ সময় পর তারা উজরা জেয়াকে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, প্রতিনিধি দলটির কাছে তারা নিহত মাস্টার মুহিবুল্লাহর সংগঠনের নেতা পরিচয় দেওয়ার পর কথা বলেন। এ সময় যে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে যেখানে রোহিঙ্গাদের নানা দাবি রয়েছে। বিষয় করে আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর