বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইইউ প্রতিনিধিদের সফর

সুষ্ঠু নির্বাচনের আইনি কাঠামো নিয়ে জিজ্ঞাসা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামো যথেষ্ট কি না তা নিয়ে খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল। গতকাল আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে তারা এসব বিষয়ে আলোচনা করে। পাশাপাশি নির্বাচনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা           করেছেন ইইউ প্রতিনিধিরা। ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইন সচিব গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের আইনি কাঠামো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট কি না তা জানতে চেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার জন্য আমাদের দেশের যে আইনি কাঠামো আছে, সেটা যথেষ্ট। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) পাস হয়েছে, সেখানে ৯১ (এ) ধারায় নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তারপরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯১ (এ)(এ) ধারা যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করেছেন। এতে তারা (ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা) সন্তুষ্ট হয়েছেন। আরেকটি বিষয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে সম্প্রতি যে আইন হয়েছে, এ উপমহাদেশে এমন আর কোনো আইন নেই। আমরা বলেছি, সার্চ কমিটির যে কাঠামো আছে, সেখানে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, যিনি প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে মনোনীত হবেন, চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং দুজন সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, যাদের একজন নারী থাকবেন, সদস্য ছিলেন। ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের কাছে আমরা আইনও দিয়েছি। এ বিষয়ে তাঁরা আমাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পেয়েছেন বলে জানান আইন সচিব। দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না; প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন কোনো আলোচনা হয়নি। তাঁদের জানিয়েছি যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখন একজন যুগ্ম জেলা জজ, আরেকজন সিনিয়র সহকারী জজের নেতৃত্বে ইনকোয়ারি কমিটি (অনুসন্ধানী কমিটি) গঠন করা হয়। তফসিলের শুরুর দিন থেকে নির্বাচনের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়া পর্যন্ত তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন। সে ক্ষেত্রে যদি নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিয়ম বা অভিযোগ থাকে, তাহলে তাঁরা প্রতিবেদন তৈরি করে নির্বাচন কমিশনারকে দেন। সে অনুসারে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে। গোলাম সারওয়ার বলেন, বাংলাদেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন। ২০০৭ সালের নভেম্বরে বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পর যখন নির্বাচন কমিশন আমাদের একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চায়, যেটি আরপিও ৯১(এ) ধারায় আছে সে ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য রিকুইজিশন দেওয়া হলে, আমরা সুপ্রিম কোর্টের সম্মতি নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করি। এরপর তারা নির্বাচন কমিশনের অধীন চলে যান। সবকিছু ইলেকশন কমিশনের সুপারভিশনে তারা করেন। অর্থাৎ নির্বাচনের আগের ও পরের দুই দিন এবং নির্বাচনের দিন- এ পাঁচ দিন তাঁরা ইসির অধীন দায়িত্ব পালন করেন। তখন নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে তাঁরা সামারি ট্রায়াল করেন। আরপিওর বিধান অনুসারে তাঁরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ বিধানের তারিফ করেছেন ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা। আরপিও নিয়ে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের কোনো পর্যবেক্ষণ ছিল কি না; জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের আইনি কাঠামোর কথা তাদের বলেছি। তাঁরা কোনো পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কি না; এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাঁরা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ আইনটি যথেষ্ট কি না। আমরা বলেছি, হ্যাঁ। আমাদের যে ম্যাকানিজম আছে, সেটি যথেষ্ট। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্য কিছু করার দরকার নেই। নির্বাচনের সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী, তা জানতে চেয়েছে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। গতকাল সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে ইইউ প্রতিনিধি দল। ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলে ছিলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক রিকোর্ডো চেলেরি, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি আইওনাও ও আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা ডোস রামোস আলভেস।

এর আগে তথ্য মন্ত্রণালয়ে ইইউ প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, নির্বাচনের সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা জানতে চেয়েছে ইইউ প্রতিনিধি দল। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের গণমাধ্যম মূলত বেসরকারি। সম্প্রচারে থাকা ৩৫টি বেসরকারি টেলিভিশন আর একটি বিটিভি। আমাদের চ্যানেলগুলোয় বিশেষ করে সামাজিকমাধ্যমে যেসব গুজব ছড়ানো হয় এবং সময়ে সময়ে গুজব তৈরি হয়েছে, তাতে দেশে হানাহানি তৈরি হয়েছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর