শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ঢাকা-১৭ নির্বাচন

আগের রাতে নয় ভোরে কেন্দ্রে যাবে ব্যালট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে তুলনামূলক কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ‘মাথাব্যথা’ না থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে বেশি নজর নির্বাচন কমিশনের। আগের রাতে ভোট হওয়ার বিতর্ক এড়াতে নির্বাচন কমিশন এ আসনের কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোরে ব্যালট পেপার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকছে সিসি ক্যামেরাও। সোমবার ১৭ জুলাই এ আসনে ভোট হবে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান কমিশনের আমলে ব্যালট পেপারে প্রথমবারের মতো সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে এ আসনে। এ উপনির্বাচনে ভোটের দিন ভোরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে ব্যালট পেপার। সংসদ নির্বাচনের মাস পাঁচেক আগে এ নির্বাচনকে ঘিরে যে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব ও অনিয়মের অভিযোগ যাতে না ওঠে সে বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ভোটের আর মাত্র তিন দিন বাকি। নির্বাচনী প্রস্তুতিও গুছিয়ে এনেছে কমিশন। আট প্রার্থীর মধ্যে সবার প্রচার চোখে না পড়লেও আচরণবিধি প্রতিপালনে তৎপরতা রয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার।

এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও ঢাকার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান জানান, ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বৈঠক হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, ‘ভোটের আগের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হবে। ভোটের দিন ভোরে একটি নির্ধারিত জায়গায় সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।’

আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার জানান, ছোটখাটো আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সতর্ক করা হয়েছিল একবার। সব মিলিয়ে আচরণবিধি ভালোভাবে মানছেন প্রার্থীরা। তবে ১৭ জুলাই সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট হবে। সিসি ক্যামেরা থাকবে সব কেন্দ্রে। নির্বাচন ভবন থেকে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

প্রার্থী যারা : আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আকতার হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেজাউল করিম স্বপন, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) এবং তরিকুল ইসলাম ভূঞা। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ইভিএমে ভোট করে আসছে। আর জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনেই হচ্ছে ব্যালট পেপারে। এ জন্য ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনকে ব্যালটে ভোট গ্রহণের জন্য ‘ট্রায়াল নির্বাচন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার দিন ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘(সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যালটের) এ নির্বাচনকে টেস্ট বা ট্রায়াল করা হচ্ছে। ব্যালটে ভোট নিতে গেলে কী কী সুবিধা হয়, কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, সে জন্য ব্যালটে ভোট নেওয়া হচ্ছে।’ সবশেষ ৪ জুলাই সিইসির সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে ইসি সচিব জানান, নির্বাচন কমিশনের বার্তা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন করা। পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি শতভাগ আস্থা রয়েছে ইসির। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকার ‘গ্যারান্টি’ দিয়ে বলেন, ‘আমি ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিলাম। ১৭ জুলাইয়ের নির্বাচন দেখেন, আমাদের নিরপেক্ষতার প্রমাণ পান কি না। যদি না পান, তখন বলবেন, আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নাকে খত দিয়ে চলে যাব।’

ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে : আইনশৃঙ্খলা সভায় ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এ সভায় উপস্থিতদের বক্তব্য, সুপারিশ ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে সভার কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্টদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। সভায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সহায়তার কারণে কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পেরেছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ের মাধ্যমে ঢাকা-১৭ শূন্য আসনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা যাবে। সব বিষয়ে তীক্ষè দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়ে সিইসি বলেছেন, মিডিয়া এ পর্যন্ত পজিটিভ রোল প্লে করে আসছে। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সবার কার্যকরী সহায়তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারে না। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা ব্যর্থতা কমিশন মেনে নেবে না। পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি। দুজন কর্মকর্তা মত দেন, উপনির্বাচনে সবচেয়ে বড় সমস্যা ভোটার উপস্থিতি। এ উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে বলে ধারণা করা হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সভায় একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, এ নির্বাচনটি কূটনৈতিক এলাকার আওতাভুক্ত এবং ছয় মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়তে পারে। ভোটার উপস্থিতি যাই হোক, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর দায়িত্ব প্রার্থীদের। ব্যালটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং ভোটের দিনের পরিবেশ নির্বিঘ্ন রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন সংশ্লিষ্টরা। কে এম নুরুল হুদা কমিশনের সময় ২০২১ সালে পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। এ কমিশনের সময় ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কের মধ্যে ঢাকা-১০ উপনির্বাচনে ইভিএমে মাত্র ৫.২৮% ভোট পড়ার নজির রয়েছে।

সর্বশেষ খবর