রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সৌদিতে মর্মান্তিক মৃত্যু ৯ বাংলাদেশির

কারখানায় আগুন

প্রতিদিন ডেস্ক

সৌদি আরবের আল আহসা শহরে এক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৯ প্রবাসী বাংলাদেশিসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপর একজন ভারতের নাগরিক। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় একটি সোফা কারখানায় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সূত্র : বাসস। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস উইং সচিব ফখরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে আগুনে দগ্ধ হয়ে নয়জন প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন এবং দুজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- রাজশাহীর বাগমারার জফির উদ্দিন ছেলে রুবেল হোসাইন, জমিরের ছেলে সাজেদুল ইসলাম, শাহাদাত হোসাইনের ছেলে আরিফ, আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরোজ আলী সরদার, নাটোরের নলডাঙ্গার দবির উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ উবায়দুল হক, নওগাঁর আত্রাইয়ের আইজাক প্রামাণিকের ছেলে রমজান, রহমান সরদারের ছেলে বারেক সরদার, মাদারীপুরের কালকিনির ইউনুস ঢালীর ছেলে জুবায়েত ঢালী এবং সাভারের নগরকুন্দার মৃত আলাউদ্দীনের ছেলে সাইফুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি কর্মী বিপ্লব হোসেন ও জুয়েল হোসেন দূতাবাস প্রতিনিধিকে জানান, ভারতীয় নাগরিকের পরিচালনাধীন সোফা কারখানাটিতে ১৪ জন বাংলাদেশি কর্মী কাজ করতেন। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে খাওয়া-দাওয়া করে কারখানার ওপরের আবাসনে কর্মীরা ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ নিচ থেকে আগুন আগুন চিৎকার শুনে তারা দুজন দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। চারদিকে কালো ধোঁয়ায় অন্ধকারে প্রবেশপথ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তারা দুজন বেরিয়ে আসতে পারলেও বাকিরা কালো ধোঁয়ায় পথ হারিয়ে ফেলেন এবং নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান। ওই সময় তিনজন কর্মী কারখানার বাইরে থাকায় তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। এদিকে এ ঘটনায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী লাশ বাংলাদেশে পাঠানো বা স্থানীয়ভাবে দাফনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সার্বিক সহায়তার জন্য শ্রমকল্যাণ উইংকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের নাটোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নাটোরের নলডাঙ্গায় মোহাম্মদ উবায়দুলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে উবাইদুল হক (৩৩) পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে দীর্ঘ তিন বছর থেকে সৌদির দাম্মাম শহরের হুফুফ সানাইয়া এলাকায় ওবাইদুল শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। কোরবানির ঈদের দিন তার ভাগ্নিসহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। সর্বশেষ তিন দিন আগেও কথা হয়। এ ঘটনার পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ না করতে ব্যর্থ হয় পরিবার। পরে গতকাল সকালে ওবাইদুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার মৃত্যর খবর পান পরিবার। খাজুরা ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন জানান, তার লাশ নিয়ে আসার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা খাতুন জানান, পরিবারের সদস্যরা লাশ ফিরে পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বাগমারা উপজেলার বড় মাধাইমুরি গ্রামের ফিরোজ আলী সরকার তিন বছর আগে সৌদি আরবে যান। এখানে তার মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তার। মৃত্যু খবর বাড়িতে পৌঁছালে নেমে আসে শোকের ছায়া। সৌদি আরবে নিহত সাতজনের বাড়িই রাজশাহীর বাগমারায়। গতকাল সরেজমিনে নিহত ফিরোজের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে চলছে স্বজন ও প্রতিবেশীদের শোকের মাতম। সবাই বাকরুদ্ধ। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তারা ঘটনা শোনার পর থেকে কাঁদছেন। ফিরোজের বাবা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভালো আছে বলে জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, ৬ মাস আগে তার ছেলে সৌদিতে গিয়েছিল। তিনি ছেলেন লাশ ফেরত চান। তিনি বলেন, তার ছেলের লাশ নিজ এলাকায় দাফন করতে চান। আরেক নিহত রুবেল হোসেনের বাবা জফির উদ্দিন ছেলেকে হারিয়ে অস্বাভাবিক হয়ে গেছেন। এ দুর্ঘটনা মানতেই পারছেন না।  এ ছাড়া সাজেদুল ইসলামও আট বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। তিনিও মারা গেছেন। তারা একসঙ্গে থাকতেন। এদের হাত ধরে একই কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন একই গ্রামের শাহাদত হোসেনের ছেলে রুবেল আলী (২৭)। ৬ মাস আগে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এর মধ্যে লাশ হলেন তিনি। উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের ফিরোজ আলী সরদার (৩৯) ছয় বছর আগে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। বাবা আনিছার রহমান বলেন, ছেলে কিছু টাকা জমিয়ে এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর