সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারি কর্মচারীদের অনেক চাওয়া

চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর আশা ♦ প্রত্যাশা আরেক দফা পদোন্নতির ♦ চায় ভর্তুকি মূল্যের পণ্য ♦ আছে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিও

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দশম গ্রেডের একজন সরকারি কর্মচারীর মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বিভিন্ন ভাতা মিলিয়ে প্রতি মাসে সাকল্যে ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি অ্যাকাউন্টে জমা হয়। অন্যদিকে প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর ২০তম গ্রেডের কর্মচারীর মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। আনুষঙ্গিক মিলিয়ে এই গ্রেডের কর্মচারী ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি প্রতি মাসে পান। এই টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া, সন্তানের শিক্ষা খরচ, ওষুধপত্রের ব্যয় বাদ দিয়ে যা থাকে তা দিয়ে মাসের বাজার খরচ মেলাতে পারছেন না তারা। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, এখন দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মজিদ এই আবেদনটি করেন। আবেদনে বলা হয়, ‘আমরা নিম্ন আয়ের কর্মচারী। অল্প বেতনে চাকরি করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কোনো রকম দিনযাপন করছি। ছেলে-মেয়েদের সুচিকিৎসাসহ লেখাপড়ার খরচ চালানো অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ছে। কোনোভাবেই সংসার খরচ বহন করতে পারছি না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিবালয়ের একটি শাখার সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এপিও) জানান, আমাদের মানের একজন কর্মচারীর বেতন ১৩ থেকে ১৫তম স্কেলে হয়- যার সাকল্যে বেতন ২৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। একজন রিকশাচালক প্রতি মাসে এর চেয়ে বেশি আয় করেন। এই টাকা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কোনোভাবেই মাস চালানো যায় না। আরেক কর্মচারী বলেন, আমরা ফ্যামিলি কার্ড পাইনি। আবার দফতর রেখে ট্রাকের লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য আনাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে টিসিবির পণ্য পেলে কিছুটা সুবিধা হয়।

বেতন-ভাতা নিয়েও অসন্তোষ : সরকার ২০১৫ সালে যে বেতন স্কেল করেছে, তাতে নতুন পে-স্কেল করার বদলে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট যোগ করার নীতি রয়েছে। সে অনুযায়ী গত কয়েক বছর ধরে ইনক্রিমেন্ট যোগ হলেও সমস্যা তৈরি হয়েছে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে। হঠাৎ করে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চাল, ডাল, লবণ, তেল সব কিছুর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। 

সচিবালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এমন কি সস্তার সবজি ২০ টাকার আলু এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। আড়াই শ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতেও ৬০ থেকে ৭০ টাকা খরচ হচ্ছে। আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই।  

বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি : বেতন স্কেলের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও ৫ শতাংশ প্রণোদনা যোগ করার যে পরামর্শ দিয়েছেন বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে- এই বৃদ্ধি কোনো প্রভাব রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন অনেক কর্মচারী। দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা জেনেছেন, এর ফলে তাদের সাকল্যে বেতন বাড়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ন্যূনতম ১ হাজার টাকা বেতন বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তাতেও তারা সন্তুষ্ট নয়। বাড়তি ১ হাজার টাকা সরকারি কর্মচারীদের দিনযাপনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন না তারা। অনেকে মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মচারীদের প্রতি আন্তরিক হলেও আইএমএফ-এর শর্তের কারণে তাদের বেতন-ভাতা বাড়াতে পারছে না। সচিবালয়ের কর্মচারীরা জানান, তারা ২০২০ সাল থেকে আশায় দিন গুনছেন একটি নতুন বেতন স্কেল হবে- বেতন বাড়বে। অন্তত নির্বাচনের আগে তারা একটি উপহার পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন।

অবসর বয়সসীমা বাড়ানোর আশা : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ নির্বাচনের আগে পদোন্নতির আশা করছেন। আরেকটি অংশ আশায় আছেন অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি পূরণের। ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের অভিযোগ : সচিব, অতিরিক্ত সচিব বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাকরির মেয়াদ শেষে অনেকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার; অবসরোত্তর ছুটি নিয়ে কেউ আবার বিভিন্ন দফতর বা সংস্থায় যোগ দিচ্ছেন। চাকরিতে থাকাবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নিজ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থায় পদ নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের সেই সুযোগ নেই। বর্তমানে সরকারি চাকরির অবসরে যাওয়ার বয়স ৫৯ বছর। এক বছর বাড়ানো চূড়ান্ত হলে অবসরের বয়সসীমা হবে ৬০। এর আগে সরকারি চাকরির অবসরে যাওয়ার বয়স ৫৭ থেকে ৫৯-এ বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন নির্বাচনের আগে সরকার অন্তত তাদের দাবি মেনে অবসরের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে দেবে।

আছে পদোন্নতির দাবিও : নির্বাচনের আগে সরকারের ক্যাডার কর্মকর্তাদের চোখ রয়েছে আরেক দফা পদোন্নতির দিকে। অনেকে সচিব হতে চান। অনেকে হতে চান অতিরিক্ত সচিব। দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা তদবির করছেন নির্বাচনের আগে আরেক দফা অতিরিক্ত সচিবের পদে পদোন্নতির জন্য। আর ২২তম বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারা বর্তমানে উপসচিব পর্যায়ে আছেন। ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের চেয়ে তারা মাত্র ছয় মাসের জুনিয়র। ইতোমধ্যে গত বছরের ২ নভেম্বর ২১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। সে কারণে ২২ ব্যাচের কর্মকর্তারাও চাচ্ছেন দ্রুত পদোন্নতি। নির্বাচনের আগে চলতি মাস বা আগামী মাসের মধ্যেই এই ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি প্রত্যাশা করছেন।

সর্বশেষ খবর