সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিক্ষার গুণগত মান আরও বাড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার গুণগত মান আরও বাড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের জাতীয় কাউন্সিল এবং বৃত্তি বিতরণ-২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। শিক্ষার মান আরও উন্নত করে আমরা বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে ১২ হাজার ৩৯৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার বৃত্তি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১১ হাজার ২৮৫ জন অসচ্ছল মেধাবী এবং ১ হাজার ১০৯ জন বিশেষচাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী। প্রধানমন্ত্রী ১০ জন অসচ্ছল মেধাবী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তি তুলে দেন। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইসিটি মাস্টার প্ল্যানসহ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন এবং তালিকায় স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষদের পক্ষে কুমিল্লার সোনার বাংলা কলেজের আবু সালেক মোহাম্মদ সৌরভ সেলিম এবং রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা বক্তব্য রাখেন। দুজন বৃত্তি গ্রহীতা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শন করা হয়। শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে নিরন্তর পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যোগ্য করে তোলার জন্য তারা সব ধরনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক করতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। আমাদের শিশুরা মেধাবী হওয়ায় বৈশ্বিক শিক্ষার একই গতি বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি বিভাগীয় সদরে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, এরোস্পেস এবং এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগে দেশে ও বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তারা তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি বলেন, ন্যানো-টেকনোলজি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি করতে আমরা ৩৯টি হাইটেক পার্ক, কম্পিউটার ইনকিউবেশন ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের স্বাধীন বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এমনভাবে শিক্ষা দিন যাতে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।

আজকের প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশের কর্ণধার। তিনি বলেন, আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ চালিয়ে যাব। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই প্রথমে আমাকে গ্রেফতার করেছিল। আমিন নামের একজন সামরিক কর্মকর্তা- যিনি তখনকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ছিলেন, তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম, আমি মর্যাদা চাই না, নির্বাচন চাই- যার মাধ্যমে দেশবাসী তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, জেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসা সেনা সদস্যকে বলেছিলাম, আমার বাবা দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমিও প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। আমার সম্পদ বা বাড়ি-গাড়ির কোনো লোভ নেই। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। আমি আমার ভাগ্য গড়তে নয়, দেশবাসীর ভাগ্য গড়তেই দেশে ফিরে এসেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতায় দেশ অনেক এগিয়েছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো ও ডিজিটাল কানেকটিভিটিসহ সার্বিক উন্নয়নে সাড়ে ১৪ বছর আগের তুলনায় আজকের বাংলাদেশ বদলে গেছে। তিনি বলেন, ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের দিকে তাকালে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের শেষ জাতীয় বাজেট দিয়েছে মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকার। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের শেষ বাজেট দিয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার সবসময় শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু শিক্ষায় ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বাজেটে শিক্ষাখাতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছিলেন এবং তাঁর সরকার শিক্ষা খাতে ৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার পরপরই সারা দেশে ৩৬ হাজার বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর সরকারও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার ছাত্রদের স্কুলে বিজ্ঞানে উৎসাহিত করতে সারা দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। কারণ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় তারা বিজ্ঞানে অল্প কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছিল।  তিনি বলেন, বিদেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার জন্য তাঁর সরকার যে বৃত্তি দিত তা বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দেয়। তিনি আরও বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) এমনকি স্কুলের জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারের কাছ থেকে টিউলিপ ব্র্যান্ডের ১০ হাজার ল্যাপটপ কেনার চুক্তি বাতিল করেছে। টিউলিপ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল হওয়া সত্ত্বেও তারা মনে করেছিল যে, শেখ রেহানা এই কোম্পানির মালিক। এ জন্য বাংলাদেশকে আইনি লড়াইয়ে হেরে নেদারল্যান্ডস সরকারকে ৬০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষার পথ থেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের রাজত্ব দেখা গেছে। তাঁর সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে।

সর্বশেষ খবর