মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্ধ অস্ত্রোপচার চেম্বারে রোগী দেখা

চিকিৎসক গ্রেফতারের প্রতিবাদে কর্মসূচি, দুই দিন মানুষ বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা পাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্ধ অস্ত্রোপচার চেম্বারে রোগী দেখা

চিকিৎসক না আসায় চট্টগ্রামে ফাঁকা হাসপাতাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দুই দিন ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। গতকাল ও আজ বন্ধ থাকবে প্রাইভেট চেম্বার। এতে রোগীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।

সারা দেশের গাইনি চিকিৎসকরা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর এই কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়েছে চিকিৎসকদের অন্যান্য সংগঠনগুলোও। এখন পর্যন্ত সোসাইটি অব সার্জনস, বাংলাদেশ; বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন, বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতি; মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থিসিওলজিস্টস ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ানস; অ্যাসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ; বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি; সোসাইটি অব অটোলারিঙ্গোলজিস্ট অ্যান্ড হেড নেক সার্জনস অব বাংলাদেশ, সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ; বাংলাদেশ একাডেমি অব প্যাথলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন একাত্মতা জানিয়েছে ওজিএসবির কর্মসূচির সঙ্গে।

অর্থাৎ চিকিৎসা খাতের প্রায় সব চিকিৎসক তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখবেন এ দুই দিন। তবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা সেবা দেবেন বলে সংগঠনগুলোর তরফ থেকে জানানো হয়েছে। কর্মসূচি নিয়ে এসব সংগঠন পৃথক বিবৃতি এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সবগুলো সংগঠনের সদস্যদের প্রতি নির্দেশনাও মোটামুটি একই রকম। সংগঠনের সদস্যদের কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত রবিবার দেশজুড়ে মানববন্ধন করেছেন গাইনি চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার কর্মবিরতির শেষে আবার বিএমএর সঙ্গে বসে পরবর্তী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে গাইনি চিকিৎসকদের সংগঠনটি। হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও চেম্বার করেননি চিকিৎসকরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রিন রোডে নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকের চেম্বারে এসেছিলেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী গলায় সার্জারি হয়েছিল। পরবর্তী কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় আজকে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আসার পরে জানতে পারি চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কথা। কবে নাগাদ রোগী দেখবেন এটাও চেম্বারের কেউ বলতে পারেননি। এসেই বিপদে পড়ে গেলাম। চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার ও সার্জারি বন্ধের কর্মসূচিতে রোগীদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছেন, এটা মানবিক না। চিকিৎসকদের মানবিক হওয়া খুব জরুরি। বড় চিকিৎসক হওয়ার চেয়ে মানবিক চিকিৎসক হওয়া খুব জরুরি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সচিব বলেন, চিকিৎসকদের বোঝা উচিত যে কাজটি করছেন, সেটি সঠিক হচ্ছে কি না। রোগী জিম্মি করা এটা তো কোনো বিষয়ের মধ্যে পড়ে না। চিকিৎসকদের মানবিক হতে হবে, রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেন। আমি মনে করি তাদের এখান থেকে ফিরে আসা জরুরি। তিনি বলেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে একটা ঘটনা ঘটেছে। সেখানে কী কী বিষয় আছে সেটা আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। খুব শিগগিরই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব। এ কথা আমরা চিকিৎসকদের বলেছি। তারা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে কর্মসূচি দিয়েছেন, তবে আমাদের সরকারি হাসপাতালসমূহ চালু আছে, সব ধরনের সেবা চালু আছে। আমরা বিশ্বাস, এ সমস্যা থাকবে না, দু-একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমরা কথা বলেছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। রোগীরা ডাক্তারের সিরিয়ালের জন্য ফোন দিলে দুই দিন চেম্বার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দিচ্ছে ল্যাবএইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহের-এ-খোদা দ্বীপ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে সব প্রাইভেট চেম্বার এবং অপারেশন বন্ধ রয়েছে। তবে ইনডোর চিকিৎসাসেবা ও ইমারজেন্সি বিভাগ চালু রয়েছে। চেম্বারে ডাক্তার দেখানোর জন্য কোনো রোগী আসেননি।’ ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজার (বিজনেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন) এম এইচ দুলাল বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে মোট ৮৫ জন ডাক্তার প্রাইভেট চেম্বার করেন। আজ সব চেম্বার বন্ধ আছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় ইমারজেন্সি ও ইনডোর সার্ভিস চালু আছে।’ দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা ও অপারেশন বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। গতকাল থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। জানা গছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) চট্টগ্রাম শাখার সদস্যরা গতকাল সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রেখেছেন। একই সঙ্গে প্রাইভেট চেম্বারও করছেন না তারা। সংগঠনটির চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুন্নেছা রুনা বলেন, ‘মামলা বা গ্রেফতারের নামে চিকিৎসক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিনা তদন্তে গ্রেফতারকৃত দুই নারী চিকিৎসককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।’ এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি ও বাংলাদেশ অটিজম অ্যান্ড ডিজএবিলিটি ইনস্টিটিউট (বাডি)। এ অবস্থায় অনেক রোগী বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। তবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান জানিয়েছেন, প্রয়োজন দেখা দিলে জরুরি অপারেশনগুলো চলবে। বগুড়ায় চেম্বারে রোগী দেখেননি চিকিৎসকরা। বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া, কলোনি, মফিজ পাগলার মোড়, নামাজগড়, ছিলিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে প্রতিদিন ৫ সহস্রাধিক রোগী বিভিন্ন বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। প্রাইভেট ক্লিনিকের চেম্বার বন্ধ রাখায় এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তারা। বগুড়া শহরের কলোনি এলাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের ডা. নাফিউজ্জামান জানান, আমরা চেষ্টা করি রোগী বাঁচানোর। কিন্তু তারপরও কোনো ঘটনায় রোগী মারা গেলে তার পূর্ণ তদন্ত না করে গ্রেফতার করা যাবে না। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. পল্লব কুমার সেন জানান, কোনো ডাক্তার রোগীকে মারার জন্য চিকিৎসা দেন না। সুতরাং হুট করে কোনো চিকিৎসককে গ্রেফতার করা ঠিক হবে না।

সর্বশেষ খবর