বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারের বিদায়ের সময় হয়ে গেছে : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের বিদায়ের সময় হয়ে গেছে : ফখরুল

বিএনপি ও সমমনা ৩৬ দলের পক্ষ থেকে গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রাজধানীর গাবতলী থেকে শুরু হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের পদযাত্রা শুধু পদযাত্রা নয়, এটি জনগণের ‘জয়যাত্রা’। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বক্তব্য রাখেন। পরে মগবাজারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সেখানে তিনি বলেন, আজকের কর্মসূচির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা আর কোনো কিছুকেই ভয় পায় না। এ সরকারের বিদায়ের সময় হয়ে গেছে। সরকারকে অচিরেই পদত্যাগ করে চলে যেতে হবে। এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ দেশের মানুষ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই এখনই তাদের পদত্যাগ করতে হবে। আমরা আবারও পরিষ্কার করে বলছি, এ অবৈধ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। কারণ গতকাল (সোমবার) ঢাকায় আমরা একটি নির্বাচনের তামাশা দেখেছি। তিনি বলেন, এসব তামাশা করে আর কোনো লাভ হবে না। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ১৫৪ আসনে বিনা ভোটে জয়লাভ করেছেন। ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করেছেন। এ ধরনের ভোট বাংলাদেশে আর হতে দেওয়া হবে না। আজকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এ আন্দোলনের মাধ্যমে এক দফা দাবি আদায় করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। বর্তমান সরকারকে অসৎ ব্যবসায়ীদের সরকার আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার ‘অসৎ ব্যবসায়ীদের সরকার’। যারা জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে যায়, সিঙ্গাপুর, কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ডে বাড়ি বানায় আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা সময় ধরে আলাপ করেন। লজ্জা হয়, দুঃখ হয়, ঘৃণা জানাই তাদের প্রতি। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী গাবতলীর সমাবেশে বলেন, দেশের ৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ী সরকারকে ক্ষমতায় চায় না। তার কারণ কয়েকদিন আগে একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ৫ ঘণ্টা কাটানো। এখানেই প্রমাণিত হয়, সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির মূল দায়িত্ব গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং জনগণের সরকার গঠন করা। আর সে কারণেই এ আন্দোলন। সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে গতকাল পূর্ব ঘোষিত এ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা ৩৬ দল। 

১৭ কিলোমিটার হেঁটে বিকালে রাজধানীর পুরান ঢাকায় রায়সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয় বিএনপির এ দীর্ঘ পদযাত্রা কর্মসূচি। আজ বুধবার সকাল ১০টায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর-উত্তরা থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়ে যাত্রাবাড়ীতে গিয়ে শেষ করার কথা রয়েছে।

রায়সাহেব বাজার এলাকায় পদযাত্রা শেষে সমাপনী বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির এ পদযাত্রা আওয়ামী লীগের জন্য শোকযাত্রা। বিএনপির পদযাত্রা দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে। আর আওয়ামী লীগের অশান্তির শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য দেশটাকে আরও লুটেপুটে খাওয়া।

তিনি বলেন, বিশ্বে এত বড় রাজনৈতিক মিছিল, মুক্তির মিছিল আর কেউ কখনো করতে পারেনি। কারও চোখ রাঙানিতে আমরা ভয় পাই না। সারা দেশে আমাদের মিছিল হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। বাংলা কলেজের সামনে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের লোকজন এমন গণধোলাই দিয়েছে পালিয়ে গেছে। যারা গণধোলাই দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ। আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যারা বাধা দেবে তাদের এমন হাল হবে। বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এ দেশের গণমানুষের অধিকার আদায় করব। যারা এত বড় মিছিল করতে পেরেছে, তারা এ সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে পারবে। আগামীকালের (আজকের) মিছিল আর বড় হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ১৭ কিলোমিটার হেঁটে রায়সাহেব বাজার এসেছি। পুরো ঢাকায় বিএনপির জনসমুদ্র। হিরো আলমকে কীভাবে আঘাত করেছে সরকার! দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেই বিএনপি ঘরে ফিরবে। বিএনপির এক দফায় হাসিনার পতন হবে। সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেন, দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে আর সে সময়ই ঢাকার মেয়র বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। দেশে ডেঙ্গু হলো হাসপাতালে, আর মেয়র পালালেন বিদেশে। এদিকে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে সমমনা দলগুলোও পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। তারা বলেছেন, একদফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, এ ভোটচোর দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদী সরকারকে দেশের মানুষ আর বরদাস্ত করতে পারছে না। এদের দখলদারিত্ব থেকে দেশ ও জনগণকে উদ্ধার করতে গণ আন্দোলনকে গণ অভ্যুত্থানে পরিণত করতে হবে। বিকালে রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

সর্বশেষ খবর