বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
১৪ দলের বৈঠক আজ

জোটপ্রধানের নির্দেশনার অপেক্ষা

রফিকুল ইসলাম রনি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিএনপির সম্ভাব্য আন্দোলন মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতির বিষয়ে মতামত জানতে আজ ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে জোটপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে শরিক দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়করা উপস্থিত থাকবেন। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জোট নেত্রী কী নির্দেশনা দেবেন, সেই অপেক্ষায় শরিক দলের নেতারা। ১৪ দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে গুরুত্ব পাবে ভোটের প্রস্তুতি ও সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা। সংসদ নির্বাচনে শরিক দলের আসন ভাগাভাগির বিষয়টিও আলোচনায় থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, সে বিষয়টিও তুলতে পারেন কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও জোটপ্রধান শেখ হাসিনা আজকের সভা আহ্বান করেছেন। সংসদ নির্বাচনের আগে এ বৈঠকে তিনি কী নির্দেশনা দেবেন, সেই অপেক্ষায় জোটের নেতারা। জোটপ্রধান যে নির্দেশনা দেবেন, সেই নির্দেশনা নিয়েই আমরা সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। একই সঙ্গে জোটগতভাবেই নির্বাচনে গিয়ে বিজয়ী হব।’ জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে ১৪-দলীয় জোটের শরিক নেতারা ছাড়াও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত থাকবেন। এর মধ্যে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা রয়েছেন। জোটের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা শরিকদের নিয়ে সর্বশেষ বৈঠক করেছিলেন গত বছরের ১৫ মার্চ। ওই বৈঠক হয়েছিল তিন বছর পর। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এবার নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেত্রীকে পাবেন শরিক দলের নেতারা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টই ঘোষণা দিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটকে নিয়েই অংশগ্রহণ করবে তাঁর দল আওয়ামী লীগ। তবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও শরিক দলগুলোকে মূল্যায়ন না করা ও আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতিতে কিছুদিন ধরেই ১৪-দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে কিছুটা মান-অভিমান, অসন্তোষের বিষয়টি সামনে চলে আসে। অভিমান থেকেই জোট থেকে বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ জাসদ। অন্যান্য শরিক দলের সিনিয়র নেতারা প্রায় প্রকাশ্যে তাঁদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে শরিকদের মান ভাঙানোর পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে নামার তাগিদ থেকেই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বৈঠক। সেই বৈঠকে আগামী নির্বাচন, বিরোধী দলের আন্দোলন, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক তৎপরতাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে বিদ্যমান নানা সমস্যাও আলোচনায় উঠে আসতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোটের শরিকদের নিয়ে এমন এক সময় বৈঠক করছেন, যখন বিএনপি ও তাদের সমমনারা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশি-বিদেশি নানা তৎপরতা চলছে, সরকারকে চাপে ফেলতে নানা চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ রাজপথে থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ভালোভাবেই মোকাবিলা করলেও তা আরও জোরালো করতে এবং সারা দেশে একটা নির্বাচনী ঢেউ তুলতেই ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের নিয়ে রাজপথে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানে আগামী নির্বাচন, জোটগতভাবে অংশগ্রহণ, নির্বাচনে জোটের ভূমিকা, বিএনপিসহ সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী অপশক্তির অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা রুখতে সব ধরনের প্রক্রিয়া, জনগণের সমস্যা নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, দলবাজির প্রসঙ্গগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’ ১৪-দলীয় জোটের নেতারা বলেন, জোটের মধ্যে বিভিন্ন সময় টানাপোড়েন থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তা এখন আর নেই। জোটবদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের পথেই এগোচ্ছেন তাঁরা। জোটবদ্ধ মেরুকরণ তৈরি করে সে অনুযায়ী তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় জোটবদ্ধ নির্বাচনের বিষয়েও জানান দিচ্ছেন তাঁরা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সর্বাত্মক ভোটযুদ্ধে নামার কৌশল চূড়ান্ত করা হতে পারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে।

জোটের আরেক শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বৈঠকে স্থান পাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক সব বিষয়। এখানে জোটের আসন নিয়েও কথা উঠতে পারে। এ ছাড়া আগামী দিনে কীভাবে নির্বাচন হবে, বিএনপি না এলে করণীয় কী, জোটগতভাবে নির্বাচন করতে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তসহ নানা ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন বাতিল হচ্ছে না? তারা কেন প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে পারছে- সে বিষয়টিও তুলে ধরব জোট নেত্রীর কাছে।’

সর্বশেষ খবর