বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাল্টাপাল্টি হামলা সংঘর্ষ আগুন

প্রতিদিন ডেস্ক

পাল্টাপাল্টি হামলা সংঘর্ষ আগুন

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি হামলা আগুন। দিনাজপুরে হামলা চালান ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে গতকালও আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দিনাজপুর ও চট্টগ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ এবং যানবাহন ভাঙচুর হয়েছে। এদিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মঙ্গলবারের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনকালে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এতে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত মিলে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের সামনে দুই পক্ষে কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। এ সময় ইটপাটকেলে উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত  হয়েছেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে আসা চারটি বাস ভাঙচুর এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আবু হুসাইন বিপুর গাড়িতে হামলা চালানো হয়। গতকাল দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই অবস্থা চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ওই এলাকায়। জানা যায়, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য বেলা ১১টা থেকেই রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বহনকারী একটি বাস আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভাঙচুর চালায়। গাড়ি থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নামলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এরপরই দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় দলের নেতা-কর্মীরা বাঁশ, কাঠ ও লোহার রড নিয়ে আঘাত এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এই ঘটনায় চারটি বাস ভাঙচুর করা হয়। দুই পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু হুসাইন বিপু জানান, দুপুরে দিনাজপুর অভিমুখে আসার সময় আমার গাড়িবহরে হামলা করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতে আমিসহ সাতজন আহত হয়েছি। সৈয়দপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ময়নুল চৌধুরী বলেন, বেলা দেড়টার দিকে আমাদের গাড়িবহর হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছালে ছাত্রলীগের ২০০ থেকে ২৫০ সদস্য অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর মাথায় হেলমেট এবং হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। ইটপাটকেল ছুড়ে গাড়িগুলো ভাঙচুর করে। তাদের এলোপাতাড়ি আক্রমণে ২৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ কাজ করছে।  নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চট্টগ্রামে পদযাত্রা শেষে চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালান। প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, হামলাকারীরা সেখানে থাকা আসবাবপত্র, একটি পাজেরো, একটি প্রাইভেট কার ও ১০-১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এ সময় সড়কে চলাচলকারী যানবাহনেও ভাঙচুর চালান তারা। এতে যানবাহনে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে বিভিন্ন দিক থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। এ সময় কয়েকজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের বহন করা একটি গাড়ি আটক করা হয়। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘পদযাত্রা থেকে যাওয়ার পথে বিএনপি নেতা-কর্মীরা নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কেন্দ্রে হামলা করেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা আশপাশে থাকা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

তবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘পদযাত্রা থেকে ফেরার পথে লালখান বাজার এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাস থেকে নামিয়ে মারধর করেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তারা বিএনপি নেতা-কর্মীদের বহনকারী গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের নসিমন ভবনের কার্যালয়ে হামলা চালান। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন।’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা জানান, মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। দুই মামলায় ২২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১ হাজার মানুষকে আসামি করা হয়। এরই মধ্যে ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতার ১৮ জনকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে গাবতলী থেকে শুরু হওয়া এ পদযাত্রা মিরপুর হয়ে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে যাওয়ার জন্য বাঙলা কলেজ এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। তবে হঠাৎ করেই শুরু হয় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। টানা আধা ঘণ্টাব্যাপী চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। বিএনপি নেতা-কর্মীরা এ সময় কলেজের ফটক ভাঙচুর এবং রাস্তায় থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। বিএনপি নেতা-কর্মীদের দাবি, শুরুতে তাদের লক্ষ্য করে সরকারি বাঙলা কলেজের ভিতর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার্থেই এর জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জয়পুরহাট সদর থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় এজাহারনামীয় ২৩১ জন এবং অজ্ঞাত ১ হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফেনী প্রতিনিধি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় বিএনপির ৮৮ জনের নাম উল্লেখসহ দেড় থেকে ২ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল ও যুগ্ম আহ্বায়ক আলা উদ্দিন গঠন। পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, বিএনপির কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে। মঙ্গলবার রাতে পিরোজপুর সদর থানায় জ্ঞাত অজ্ঞাত ৩৮০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। মামলায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু প্রধান আসামি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ১৫ জনকে আটক করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া জানান, বগুড়ায় কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশের দায়ের করা ৪ মামলায় দুই শতাধিক বিএনপির নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির অনেক নেতা গাঢাকা দিতে এলাকা ছেড়েছেন। মামলার পরপরই মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে শহরের সূত্রাপুর রিয়াজ কাজী লেনের বাসা থেকে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও শহরের পুরান বগুড়ার বাসা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েলকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ছাড়া দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।  বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহিনুজ্জামান শাহীন জানান, গত ১৮ জুলাই কর্মসূচির নামে বিএনপি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় সদরে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলায় অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন নাম প্রকাশ করা হবে না। দুটি বিস্ফোরক আইনে ও একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। তিনটি মামলারই বাদী পুলিশ। 

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল নেতা নিহতের ঘটনাকে অস্বীকার করেছে পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নয়, ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে তিন/চারজন যুবক তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে জেলা পুলিশ সুপার    দাবি করেছেন।

সর্বশেষ খবর