বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিএনপির পদযাত্রায় মির্জা আব্বাস

তাদের সংবিধানে নির্বাচন নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

তাদের সংবিধানে নির্বাচন নয়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আওয়ামী লীগের তৈরি, বিচারপতি খায়রুল হকের লেখা সংবিধানের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তিনি বলেন, দেখলাম কাদের সাহেব (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, সংবিধানের বাইরে আপনারা একচুলও সরবেন না। খুব ভালো কথা। আপনার কথায় আপনি স্থির থাকেন। আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা-ও যাব না। সবার লক্ষ্য সংবিধান। তবে খায়রুল হকের (এ বি এম খায়রুল হক) সংবিধান না, বাংলাদেশের সংবিধান।

রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে গতকাল দলের পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এতে সভাপতিত্ব করেন। উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এদিকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রায় হামলা, গুলি ও হত্যার প্রতিবাদে আজ শোকমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। ঢাকায় বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ শোকমিছিল বের হবে। গতকাল বিকালে যাত্রাবাড়ীতে পদযাত্রা সমাপনী বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

ঢাকায় বিএনপির পদযাত্রা গতকাল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে আবদুল্লাহপুর থেকে শুরু হয়। সেটি বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড, নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরা ব্রিজ, মালিবাগ, বাসাবো, মুগদা, সায়েদাবাদ হয়ে যাত্রাবাড়ী গিয়ে শেষ হয়। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী এ পদযাত্রায় অংশ নেন। ঢাকায় এ পদযাত্রা ছিল দুই পর্বে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে পদযাত্রা শুরু হয়ে রামপুরা ব্রিজে গিয়ে শেষ হয়। এরপর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু করে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে গিয়ে শেষ করে। যাত্রাবাড়ীতে পদযাত্রা সমাপনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ, তানভীর আহমেদ, নবীউল্লাহ নবী, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দল সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা চাই অখন্ড সংবিধান। যে সংবিধান থেকে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে, ওই সংবিধান আমরা চাই না। বাংলাদেশের জনগণ যে সংবিধান তৈরি করেছিল, সেই সংবিধানের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনারা শান্তিমিছিলের নামে অশান্তি তৈরি করছেন। লক্ষ্মীপুরে আমাদের লোক মেরেছেন। আমাদের মিটিংয়ে মিছিলে কোনো গোলযোগ হয় না। আপনারা গোলযোগ তৈরি করতে চান কেন? গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা মিছিল-মিটিং করব, আপনারা বাঙলা কলেজ থেকে ইট মারবেন, পাথর মারবেন, আর আমরা ছেড়ে দেব, এটা তো হবে না। ছেড়ে দেওয়ার দিন শেষ, এখন খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের জনগণ ভোটের অধিকার আদায় করে নেবে। গত ১৫ বছর আপনাদের অত্যাচার আমরা সহ্য করেছি, এ অত্যাচার আর আমরা সইব না। আমরা অত্যাচারের জবাব দেব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আমাদের এক দফা এক দাবি, এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বলতে চাই, আওয়ামী স্বৈরাচারকে দূর করুন, এই নতুন প্রজন্ম আপনারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। আমরা আপনাদের স্বাগত জানাব।

দিনাজপুর : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ পদযাত্রা বিজয়ের যাত্রা। ১০ দফা দিয়েছিলাম। এখন এক দফায় এনেছি। এক দফা হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এ মুহূর্তে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এ নির্বাচন কমিশন অযোগ্য, অথর্ব; যা হুকুম করে সরকার তাই তারা করে। দিনাজপুরে গতকাল বিএনপির পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এ সমাবেশ বানচাল করার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বহু চেষ্টা করেছে। দিনাজপুর শহরের রাস্তায় আসার সময় হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তারা হামলা করে আমাদের গাড়িগুলো ভাঙচুর করে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। এতে ৫০-৬০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাতে কি তারা এ সমাবেশ ঠেকাতে পেরেছে। পারে নাই। কারণ এ আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়। এ আন্দোলন শুধু মির্জা ফখরুল, তারেক রহমান কিংবা বেগম খালেদা জিয়ার নয়। এ আন্দোলন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আন্দোলন। তাদের বেঁচে থাকার আন্দোলন। তাদের মুক্তির আন্দোলন। তাদের ভোট দেওয়ার অধিকারের আন্দোলন।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসন জাফির তুহিন এতে সভাপতিত্ব করেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, তাঁতীদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, পদযাত্রার মাধ্যমে সরকার পতনের মেসেজ দিয়েছে জনগণ। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ী দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর নাছির উদ্দিন, এস এম ফজলুল হক, গোলাম আকবর খোন্দকার, এম নাজিম উদ্দিন, মাহবুবের রহমান শামীম, হারুনুর রশীদ, মীর হেলাল, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জেলা বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, কামরুল ইসলাম প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন। পদযাত্রা চট্টগ্রাম বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়। এটি নিউমার্কেট, কদমতলী মোড় হয়ে দেওয়ানহাট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

খুলনা : খুলনায় বিএনপির পদযাত্রা দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে শহরের কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়। এটি কোর্ট ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি সরকার পদত্যাগ করুন। আর যদি পদত্যাগ না করেন অচিরেই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা এতে সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, খান রবিউল ইসলাম রবি, জেলা বিএনপি নেতা আমীর এজাজ খান, শফিকুল আলম তুহিন, মনিরুল হাসান বাপ্পী, আমীর হোসেন বাবু প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া সাতক্ষীরা, মাগুরা, মেহেরপুর, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমমনা দলগুলোও পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, লেবার পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি।

সর্বশেষ খবর