বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে

ড. বদিউল আলম মজুমদার

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে। নির্বাচন হলো বিকল্প থেকে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা, অধিকার ও সুযোগ। তাই যেখানে বিকল্প থাকে না, সেখানে নির্বাচনও হয় না। তবে বিকল্প হতে হবে যথার্থ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ ও নির্বাচন মূল্যায়ন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ছিল না বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। তাদের ভাষ্য, ভোটারদের আগ্রহও ছিল কম। নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে, তা বলা যাবে না। যা হয়েছে, তা ভোটাভুটির অনুশীলন। সুজন আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক, মোহাম্মদ সিকান্দার খান, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, শফিউদ্দিন আহমেদসহ সুজনের স্থানীয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সুজনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এতে প্রার্থীদের মামলা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রার্থীর ওপর হামলার তথ্য তুলে ধরা হয়। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন হলো বিকল্প থেকে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা, অধিকার ও সুযোগ। তাই যেখানে বিকল্প থাকে না, সেখানে নির্বাচনও হয় না। তবে বিকল্প হতে হবে যথার্থ। যেমন, সেদ্ধ পানি মিনারেল ওয়াটারের বিকল্প হতে পারে, কারণ দুটোকেই নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু ট্যাপের পানি এর কোনোটিরই বিকল্প নয়, তাই এ ক্ষেত্রে ‘নির্বাচনে’রও সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটির তথাকথিত নির্বাচনে মেয়র পদে, রূপক অর্থে, সেদ্ধ/মিনারেল ওয়াটারের বিপরীতে ট্যাপের পানি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল, যার ফলে এসব ক্ষেত্রে ভোটারদের সামনে কোনো যথার্থ বিকল্প ছিল না। উপরন্তু বরিশালে সহিংসতার অভিযোগে ইসলামী আন্দোলনের সরে দাঁড়ানোর ফলে সিলেট ও রাজশাহী সিটির নির্বাচন অনেকটা অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়। তাই এই পাঁচটি সিটিতে মেয়র পদে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলা কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না- বরং এগুলোকে সর্বোচ্চ ভোটাভুটির বহুলাংশে শান্তিপূর্ণ অনুশীলন বলাই সমীচীন। সুজনের তথ্যমতে, পাঁচ সিটির মেয়র ও কাউন্সিলরদের ৮০ শতাংশই ব্যবসায়ী। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে খুলনায় সবচেয়ে বেশি এবং সিলেটে সবচেয়ে কম ব্যবসায়ী। এ প্রসঙ্গে ড. শাহদীন মালিক বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়রদের আয়ের উৎস ব্যবসা। মেয়রদের ব্যবসা করার নীতি থাকা উচিত নয়। ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের এখানে নির্বাচন হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার স্টাইলে। দেশটির একটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র দখল করে রেখেছে। আমাদের এখানেও একটি গোষ্ঠী রাষ্ট্র দখল করে ফেলেছে। এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বাইরে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রার্থীরা হলফনামা জমা দিলেও তার সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হয় না। এটি যাচাইয়ের সুযোগও নেই। হলফনামা জমা দিতে হয়, তাই দেয়। এটিকে অর্থবহ না করেই নির্বাচন-নির্বাচন খেলা চলছে। সুজন-চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি সিকান্দার খান বলেন, দেশে নির্বাচন-নির্বাচন খেলা বহুদিন ধরেই চলছে। রাজনীতিবিদদের মুখে উচ্চারিত ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ স্লোগান এটিই প্রমাণ করে। আমাদের এই ‘খেলা’ থেকে বেরোতে হবে। দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সাধারণত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট পড়ার হার বেশি থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে তেমনটি দেখা যায়নি। নির্বাচনের আগে থেকে ধারণা করা হচ্ছিল যে, যেহেতু সব দলের অংশগ্রহণে এই নির্বাচন হচ্ছে না, সে কারণে ভোট পড়ার হার কম হতে পারে। হয়েছেও তাই।

সর্বশেষ খবর