শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

একাধিক জোট ও ফ্রন্ট মাঠে নামাবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ‘জোট ও ফ্রন্ট’ বানিয়ে মাঠে নামাবে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের ঐক্য অটুট রেখে নতুন কোনো দল যদি নির্বাচনী জোটে আসতে চায় তাদেরও স্বাগত জানাবে ক্ষমতাসীন দলটি। দুই জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে একত্র করার চিন্তা করা হচ্ছে। তারা জোটগতভাবে আওয়ামী লীগের বা ১৪-দলীয় জোটের কর্মসূচিতে অংশ নেবে।

গত রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে  ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে জোটগতভাবে যথাসময়ে সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন করার সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয় বৈঠকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থ লুটপাটকারীদের লাগাম টেনে ধরার জন্য সরকারপ্রধানকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করেন জোটের শীর্ষ নেতারা। তা ছাড়া নির্বাচনী পরিস্থিতি দেখার নামে বিদেশিদের অতি বাড়াবাড়ি পছন্দ নয় জোটের শরিকদের। আগামী অক্টোবরের আগেই এমপি মনোনয়নের বিষয়টি সমাধান করতে আহ্বান জানান জোট নেতারা। একই সঙ্গে জোটের যারা বর্তমান এমপি রয়েছেন, তাদের আসনে আগামীতে যেন অন্য কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া হয়, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা চান জোটের এমপিরা। এসব বিষয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেই চলব। কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। কিন্তু বিদেশি কোনো চাপের কাছে মাথা নত করব না। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন। কারও কাছে মাথা নত করেননি। আমিও দেশের মানুষের স্বার্থ বিলিয়ে দিয়ে কোনো বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করব না। জাতির সম্মান রক্ষার জন্য যা করার করব। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, গণতন্ত্রী পার্টির ব্যারিস্টার আরশ আলী, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, অসীত বরণ, ন্যাপের আইভী রহমান বক্তৃতা করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের শিরীন আখতার, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির জাকির হোসেন, ন্যাপের মোহাম্মদ আলী ফারুক, গণ-আজাদী লীগের এস কে শিকদার, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, তরিকত ফেডারেশনের ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণালকান্তি দাস, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকসূত্র জানান, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, দীর্ঘদিন পর ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের এ বৈঠক আমাদের শক্তি আরও বাড়িয়ে দেবে। ঐক্য আরও সুদৃঢ় হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জোটের মুখপাত্র আমু বলেন, অনেক রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে আসতে চায়। অনেকে যোগাযোগ করেছে। এর মধ্যে কিছু ইসলামী দলও রয়েছে। যারা মুক্তিযুুদ্ধের পক্ষের শক্তি। বিএনপি তো ৩২ দল, ১২ দল, ১৭ দল নিয়ে নির্বাচনী জোট করছে। আমরাও জোটের পরিধি বাড়াতে পারি কি না তা ভেবে দেখা দরকার। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুুদ্ধের পক্ষের শক্তি হলে আমরা নিতে পারি। আমাদের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক মূল চেতনা যদি ঠিক থাকে, তাহলে স্বাগত জানাব। তবে তারা ১৪ দল নয়, আলাদা জোট হতে পারে। নির্বাচনী জোট হতে পারে। তারাও আলাদাভাবে মুভ করবে। নির্বাচনে অংশ নেবে। বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ইইউ ও আমেরিকা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার নামে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। ইইউর প্রতিনিধি দল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের বি-টিম এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে প্রমাণ করেছে তারা ষড়যন্ত্র করছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের দলের সঙ্গে কেন বসবে? তারা অতি বাড়াবাড়ি করছে। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। চলতেই থাকবে। কিন্তু থেমে থাকলে চলবে না। যথাসময়েই সাংবিধানিক পন্থায় নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ীই যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

জাসদ সভাপতি হাসানুল ইনু বলেন, বিএনপি-জামায়াত সাংবিধানিক ধারা বানচাল করতে চায়। রাজনীতির সাপবিচ্ছু হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সে ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু কাঁচা মরিচের ঝাঁজে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। উন্নয়নের পথে বাধা কিছু সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটকে শক্ত হাতে ধ্বংস করতে হবে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যথাসময়েই এবং ১৪ দলগতভাবে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। কেউ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতায় থাকলে ষড়যন্ত্র হয়। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কারণে জাতির পিতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আপনাকে (শেখ হাসিনা) সাহসিকতার সঙ্গে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জামায়াতের বিরুদ্ধে করা রিট দ্রুত নিষ্পিত্তির জন্য তাগিদ দেন। জামায়াত-শিবির কেন এখনো প্রকাশ্যে সভাসমাবেশ করছে সে বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান পাটকল শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বিএনপির অনেক নেতার পাচার করা অর্থ বিদেশে জব্দ রয়েছে : শেখ হাসিনা :

প্রথমে সূচনা বক্তব্য দেন জোটপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপির অনেক নেতার পাচার করা অর্থ বিদেশে ফ্রিজ (জব্দ) অবস্থায় রয়েছে। এসব অর্থ সরকার পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এ সময় শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে দেশের যে দুরবস্থা ছিল সেটাও উল্লেখ করেন। দুর্নীতি করে তারেক-কোকোর পাচার করা ৪০ কোটি টাকা সরকার ফিরিয়ে এনেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, মুশকিলটা হলো যেসব দেশে টাকাটা রাখে তারা ছাড়তে চায় না। বিএনপির অনেক নেতার টাকা ফ্রিজ করা আছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি পর্যায়ক্রমে সেগুলো নিয়ে আসতে। তিনি বলেন, আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সমস্যায় পড়ে গেছি। যার ফলে স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন। এর ফলে কেনাকাটা, অর্থ আদানপ্রদান, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। আমাদের দেশের মানুষের একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে- যখন পেয়ে যায় তখন তার কদরটা ভুলে যায়। মাঝখানে হঠাৎ কয়লা ও গ্যাসের দাম বেড়ে গেল। বেড়ে যাওয়ার চেয়ে বড় বিষয় ছিল পাওয়াই যাচ্ছিল না। যেখানেই গেছি সমস্ত জিনিস কেনা হয়ে গেছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সব কেনা। এরকম অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম। তখন কিছুদিন কয়লার অভাব হলো। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন একটু কমে গেল। লোডশেডিং আমাদের দিতে হলো। লোডশেডিংয়ে একটা জিনিস আসলে ভালোই হয়েছে, কী অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ সেটা বোধহয় একটু উপলব্ধি করতে পারল। এখন সেই অবস্থা থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি।

সর্বশেষ খবর