শনিবার, ২২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

তারেক রহমানের এত টাকা আসলো কোথা থেকে

আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারেক রহমানের এত টাকা আসলো কোথা থেকে

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ‘যত টাকা লাগে আমি আছি, তোমরা আন্দোলন কর’ স্কাইপিতে প্রচারিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এমন বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বললেন- ‘তার এত টাকা কোথা থেকে আসলো? কী কামাই করে? আয়ের উৎস কী? রাজনীতি করবে না মুচলেকা দিয়ে বিদেশের মাটিতে বসে বিলাসী জীবনযাপন করছে। টাকা পেল কোথা থেকে?’ গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় এমন প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত  একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংসদীয় বোর্ডের সভায় নেত্রকোনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৩০ জুলাই গণভবনে যে বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল, তা পরিবর্তন করে আগামী ৬ আগস্ট করার সিদ্ধান্ত জানান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বৈঠকে গণমাধ্যমের সামনে কোনো সূচনা বক্তব্য দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে (জিসিআরজি) ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান ইদানীং স্কাইপিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলে বেড়াচ্ছেন, ‘তোমরা মাঠে থাকো। আন্দোলন করো। টাকা-পয়সা যা লাগে, কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করো না। আমি সব দেব।’ আমার প্রশ্ন, এত টাকা তারেক রহমান পেল কোথায়? তার আয়ের উৎস কী? মানিং লন্ডারিং করে বাংলাদেশ থেকে কত টাকা নিয়ে গেছে? এগুলো দেশবাসীকে তো জানাতে হবে। জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। তারেকের পিতা খুনি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিল। ওরা খুনির পরিবার। দেশের অর্থ পাচারকারী। গ্রেনেড হামলা মামলা ও দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তারেক সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তাদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। ‘আর কখনো রাজনীতি করবো না’ মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে তারেক রহমান। এখন বিদেশে বসে এত বড় বড় কথা বলে? এত টাকা পেল কোথায়? আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে দেশের পরিস্থিতি কী ছিল, সেগুলো দেশবাসীকে জানাতে হবে। ওরা দেশকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল। দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করেছিল। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছিল। আমরা দেশকে কী দিয়েছি। সেটা দেশবাসীকে জানানো দরকার। ওদের আমলে দেশের অর্থনীতি কী ছিল? বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কী ছিল? রিজার্ভ কেমন ছিল? সেগুলো জনগণকে জানাতে হবে। আমরা কী কী করেছি, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ে দেশের কল্যাণে যেসব কাজ করেছি সেগুলো দেশবাসীকে জানাতে হবে। 

সূত্র জানায়, বৈঠকে নেত্রকোনা-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী সাজ্জাদুল হাসানের দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাজ্জাদের পিতা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। সাজ্জাদ আমার পিএস-১ ও সচিব থাকা অবস্থায় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে ব্যাপক সম্পৃক্ততা রয়েছে। দলীয় রিপোর্টসহ সব রিপোর্ট ভালো এসেছে। আমাদের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও তাকেই নৌকা দিলাম।  বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রশিদুল আলম, আবদুস সোবহান গোলাপ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সায়েম খান প্রমুখ।  

ভবিষ্যৎ ধকল মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আবশ্যক : ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর আবারও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে চলেছে। যুদ্ধের প্রতিটি দিন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এবং বিশ্বের দূরতম প্রান্তে অনেক জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং ধ্বংস করছে। ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার এ সময়ে ভবিষ্যতের ধকল মোকাবিলায় দুর্বলদের জন্য সহনশীলতা তৈরিতে স্পষ্টত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আবশ্যক। গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে (জিসিআরজি) ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল রাতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আজ যখন ক্রমবর্ধমান সংকট এবং মানবতার ওপর এর বিধ্বংসী প্রভাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি, দুঃখজনকভাবে তখন ইউক্রেনে সংঘাত চলছে। প্রতিদিন যুদ্ধে নতুন নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আরও বেশি ধ্বংস ডেকে আনছে এবং সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, দারিদ্র্য ও বৈষম্য তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এসব সমস্যা এবং অন্যান্য ধাক্কা বিশ্বজুড়ে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। যার ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতিতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপে ভুগছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের ধকল মোকাবিলায় সহনশীলতা তৈরি করতে তাঁর কয়েকটি নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা তাঁর প্রথম চিন্তায় বলেন, আমাদের জরুরিভাবে একটি সংস্কারকৃত আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামো প্রয়োজন, যা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনাশর্তে রেয়াতি, স্বল্প-মূল্যের, স্বল্প সুদের তহবিলে প্রবেশাধিকারসহ আর্থিক সুবিধা দেবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবশ্যই জরুরি অবস্থার সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলের ন্যায়সংগত অ্যাক্সেসসহ সংকট ও বিপর্যয়কালে তহবিলে সহজ অ্যাক্সেস থাকতে হবে। এ ছাড়া, আইএফআই ও এমডিবি থেকে নিম্ন সুদে তহবিল প্রাপ্তির সুযোগ থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যেসব কারণ খাদ্যের মূল্য ও এটি পাওয়ার অধিকারকে প্রভাবিত করে, যেমন- রপ্তানি বিধিনিষেধ, মজুদ ও সরবরাহ চেইন বিকৃতি- এসবের সুরাহা করতে হবে। তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে আমরা খাদ্য সরবরাহের উন্নতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাজার উন্মুক্ত রাখা, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অপসারণ এবং খাদ্য মজুদ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বানকে পূর্ণ সমর্থন করি। প্রধানমন্ত্রী ব্ল্যাক সি ইনিশিয়েটিভের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মানুষকে খাদ্য দিতে এবং জীবন বাঁচাতে এটি আরও সম্প্রসারণ করা দরকার। তৃতীয় পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সংমিশ্রণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে জ্বালানি আমদানি হ্রাসের পাশাপাশি জ্বালানি শক্তিকে বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকার নীতি সহায়তা প্রদান করে এবং জ্বালানি খাতে ও সবুজ জ্বালানির রূপান্তরে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার মাধ্যমে জ্বালানির রূপান্তরকে সহায়তা দেয়।

প্রধানমন্ত্রী কাল ইতালি যাচ্ছেন : জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে ‘ইউনাইটেড নেশনস ফুড সিস্টেমস+২ স্টকটেকিং মোমেন্ট’ (ইউএনএফএসএস+২) সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল রবিবার রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতালির রোমে ২৪-২৬ জুলাই ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও)-এর সদর দফতরে ‘মানুষ, পৃথিবী ও সমৃদ্ধির জন্য টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা : একটি যূথযাত্রায় বিভিন্ন পথ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ইউএনএফএসএস+২ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সফরসূচি অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী ইতালি সফরে খুব ব্যস্ত সময় কাটাবেন। সোমবার তিনি এফএও সদর দফতরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন। ফোরামে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, কৃষি বিশেষজ্ঞ, খাদ্য উৎপাদনকারী, বিজ্ঞানী, গবেষক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডার উপস্থিত থাকবেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসসহ অন্যদেরও অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী ‘ফুড সিস্টেম অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে অংশ নেবেন। সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ইউরোপের ১৫টি দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত ‘আঞ্চলিক দূত সম্মেলনে’ যোগ দেবেন।

২৫ জুলাই মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে ‘জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা’ এবং ‘সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি’ শীর্ষক দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া, রোমভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও), ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড অব অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি) এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী প্রধানরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সংসদ সদস্য ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ‘ইউএনএফএসএস+২’-এ যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ২৬ জুলাই দেশের উদ্দেশে রোম ত্যাগ করবেন।

২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘ইউনাইটেড নেশনস ফুড সিস্টেমস সামিট’-এ গৃহীত সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার লক্ষ্যে ‘ইউএনএফএসএস+২’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০২১ সালের ইউএন ফুড সিস্টেম সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছিলেন।

সর্বশেষ খবর