রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ঝালকাঠিতে বাস পুকুরে পড়ে নিহত ১৭

বেপরোয়া গতিতে সর্বনাশ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

বেপরোয়া গতিতে সর্বনাশ

ঝালকাঠিতে গতকাল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায় বাস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঝালকাঠিতে যাত্রীবাহী বাস উল্টে পুকুরে পড়ে ১৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় ইউপি ভবনের সামনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৬৫৪৯ নম্বরের বাশার স্মৃতি পরিবহন বাসটি প্রায় ৬০-৭০ জন যাত্রী নিয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি গাড়ির ছাদেও যাত্রী ছিল বলে জানিয়েছেন আহত যাত্রীরা। উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। বাসটি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে ৯টায় ছেড়ে বরিশালের উদ্দেশে যাচ্ছিল। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নিহত ১৭ জনের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করেছে প্রশাসন।

অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মামুন শিবলীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কান্নার রোল স্বজনদের আহাজারিতে নিহতদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, সকাল ৯টার দিকে ভান্ডারিয়া থেকে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল ওই বাস। পথিমধ্যে সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় পৌঁছলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপি ভবনের সামনের মোড় ঘুরতেই যাত্রীবাহী একটি ইজিবাইককে সাইড দিতে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি ডোবায় পড়ে যায়। দ্রুতগতিতে চালানোর জন্য বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায় বলে জানা গেছে। পরে স্থানীয়রা দৌড়াদৌড়ি করে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এ সময় ৩৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে ১৭ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীর সংখ্যাই বেশি। সবার পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

জানা গেছে, জেলা পুলিশের উদ্ধারযন্ত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার করে উদ্ধার সম্পন্ন করা হয়। এর পরে সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ফায়ার সার্ভিস পুকুরের পানি সড়িয়ে ফেলার কাজ করছিল।

পুলিশ জানায়, পরিচয় শনাক্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। নিহতদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। গিাড়িটিকে উদ্ধার করতে জেলা পুলিশের উদ্ধারযন্ত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। এর মধ্যে কী পরিমাণ যাত্রী আছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

এ ঘটনায় ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আলহাজ আমির হোসেন আমু এক বার্তায় নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন এবং শোক প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিজুম, জেলা পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের লাশ দাফন করতে পুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা করে সহায়তা করবেন বলে ঘোষণা করেছেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. আকতারুজ্জামান।

ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার সময় লাশ হলেন তারেক : ৮ বছর বয়সী পুত্র সন্তান নাইমকে ডাক্তার দেখাতে বরিশালের বাসে উঠেছিলেন দক্ষিণ ভান্ডারিয়া নিবাসী তারেক (৪০)। ভান্ডারিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল ৯টায় বাশার স্মৃতি পরিবহন বাসটির যাত্রী হন তারা। সারাপথে খুব ধীরে গাড়ি চালানোয় যাত্রী সংগ্রহে নির্ধারিত সময়ের অধিকাংশই শেষ হয়ে যায়। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ছত্রকান্দা নামক স্থানে পৌঁছলে গতি না কমিয়ে একটি অটোকে সাইড দিতে গেলে গাড়িটি উল্টে পুকুরে পড়ে যায়। সেখান থেকে ১৭ জনকে মৃতাবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে তারেক মারা গেলেও কিশোর বয়সী নাইমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলেন তারেকের ভাই সাগর।

সাগর জানান, ভাইর ছেলেটা অসুস্থ, তাকে সুস্থ্য করতে ভাই বরিশালে নিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় পড়ে ভাই চিরতরে হারিয়ে গেল। ভাইর শোকে পুরো পরিবার এখন মুহ্যমান।

শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে নিহত নিপাসহ তিন জন : ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বলাইবাড়ি এলাকার পিত্রালয় থেকে বরিশালের হিজলা উপজেলার শ্বশুরবাড়িতে যেতে রওনা দেন নিপা (২৬)। সঙ্গে ছিল দেবর নয়ন (১৫) ও এক বছর বয়সী শিশুকন্যা নিপা। বাশার স্মৃতি পরিবহনের যাত্রী ছিলেন তারা।

মেয়ে নাতনিকে হারিয়ে সদর হাসপাতালে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বেঁচে যাওয়া নুরনেহার বেগম। হাসপাতালে বসে আহাজারি করে কান্না করছিলেন তিনি। শুধু নুরনেহারই নয়, অন্যান্য আত্মীয়স্বজনরাও হাসপাতালের ফ্লোরে আহাজারি করছিলেন। এতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।

সর্বশেষ খবর