রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু ভয়াবহতার শেষ কোথায়

মৃত্যু আরও ১১ জনের, আক্রান্ত ৩০ হাজার ছাড়াল, চলতি মাসে ২২ দিনে মৃত্যু ১২০ জনের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গুর থাবায় চলতি মাসের ২২ দিনেই প্রাণ হারিয়েছেন ১২০ জন। প্রতিদিন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে ২ হাজারের বেশি মানুষ। ডেঙ্গু রোগীর ভিড়ে হাসপাতালে হিমশিম পরিস্থিতি। রাজধানীতে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত। এ বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৬৭ জন। গত বছরেও ২৮১ জনের প্রাণহানি হয়েছে ডেঙ্গুতে। তবু টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। গতকাল রাজধানীর এক বেসরকারি হাসপাতালের করিডরে আট মাস বয়সী ছেলেকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন ফাহমিদা বেগম। ছোট্ট তাসিফের হাতে লাগানো ক্যানোলা। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তিন দিন আগে আক্রান্ত হয়েছেন আমার স্বামীও। সরকারি হাসপাতালে বেড না পেয়ে বেসরকারিতে ভর্তি করেছি। এখানেও সিট পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। দুজনকে নিয়ে আমার জীবনের ওপর দিয়ে ঝড় চলে যাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের খরচ মেটাতে নিজের সব সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছি এই সাত দিনেই। একটা মশার কামড়ে আমার স্বামী-সন্তান আজ জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি। প্রতি বছর ডেঙ্গুজ্বর হয়, কিন্তু এটার প্রতিকারে আগে থেকে কোনো উদ্যোগ নেয় না সিটি করপোরেশনগুলো। যার পরিবারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে একমাত্র সেই জানে এর ভয়াবহতা।’     

গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৪২ জন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৩৯ জন, আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৬ হাজার ৬৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৮৩৯ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৮১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৬৮৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৮ হাজার ৮৮৫ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১১ হাজার ৮০০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩ হাজার ৮৬২ জন। ঢাকায় ১৪ হাজার ৯১৫ এবং ঢাকার বাইরে ৮ হাজার ৯৪৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতি হলেও এখনো হেলথ ইমারজেন্সি ঘোষণার অবস্থা তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ অবস্থায় ডেঙ্গু সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে হলে সবাইকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। জাহিদ মালেক বলেন, দেশে গত কিছুদিন ধরে আবারও ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। ঢাকায় রোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল থাকলেও এখন ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা দ্রুতই এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব। মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাসাবাড়ির ছাদ, আঙিনায় যেন পানি জমে না থাকে, সেই খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, এমন তো হচ্ছে না যে হাসপাতালে গিয়ে ডেঙ্গু রোগীরা সেবা পাচ্ছে না, তাহলে কেন হেলথ ইমারজেন্সি ঘোষণা করতে হবে? আমি মনে করি হেলথ ইমারজেন্সির সময় এখনো আসেনি। দুই সিটি করপোরেশনের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, বেশ কিছু এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এই হটস্পটগুলোতে দ্রুততার সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণ করুন। আর নয়তো ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। হাসপাতাল প্রস্তুত, তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় মশা মারার ওপর জোর দিতে হবে। জাহিদ মালেক বলেন, কলকারখানা এবং অফিসগুলোতেও লার্ভা জমছে, এগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে  স্প্রে করার উদ্যোগ নিতে হবে। এডিস মশা মারার ওষুধ কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তা দেখার আহ্বানও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিয়াতুজ্জামান।

সর্বশেষ খবর