রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
তারুণ্যের সমাবেশে ফখরুল

নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভোট নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভোট নয়

‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিরোধী দলকে দমনে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। ভয় দেখিয়ে সরকার বিরোধী দলকে দূরে রেখে নির্বাচন করার অপকৌশলে লিপ্ত। এ চক্রান্ত মানুষ আর সহ্য করবে না। নির্দলীয় সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচন হবে না। রাজপথেই ফয়সালা হবে।’ তিনি বলেন, দাবি একটাই- সেটা হলো ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ’। এ দাবিতেই আগামী ২৭ জুলাই দুপুর ২টায় ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা দলমত নির্বিশেষ এতে অংশ নিন।

গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির তিন অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সমাবেশের শুরুতেই নেতাদের চাপে দেবে যায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ মঞ্চ। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন মঞ্চে থাকা নেতা-কর্মীরা। প্রধান অতিথি সমাবেশ স্থলে আসার আগেই এ ঘটনা ঘটে। পরে একটি ট্রাক এনে সেটাকে মঞ্চ হিসেবে বানিয়ে তার ওপর উঠে নেতারা বক্তব্য রাখেন। দুপুর ২টায় সমাবেশের সময় নির্ধারিত থাকলেও সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা সেখানে আসতে শুরু করেন। এ সময় তারা ‘মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘গুম করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, খালেদা জিয়া লড়বে’, ‘এ মুহূর্তে দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, ‘দফা এক, দাবি এক এ সরকারের পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগানে পুরো এলাকা সরগরম করে রাখেন।

সমাবেশ ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রামনা পার্কসহ আশপাশের এলাকা লোকারণ্য হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে এর বিস্তৃতি ঘটে শাহবাগ মোড়, পল্টন, কাকরাইলসহ আশপাশের পুরো এলাকা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে নেতা-কর্মীরা আসায় এসব এলাকার সড়কগুলোয় তীব্র যানজট দেখা গেছে। এ ছাড়া কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী, নারয়াণগঞ্জ, আবদুল্লাহপুর, সাভার, নবীনগর, আমিনবাজারসহ ঢাকার প্রবেশ পথগুলোয় পুলিশের তল্লাশি ও বাধার কারণে দিনভর ব্যাপক যানজট ছিল। যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে তারুণ্যের সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির সহপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বিদেশিদের বলছেন, আমরা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দেব, অথচ নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়ে নির্বাচনী মাঠ খালি করা শুরু করেছে। সেই পুরনো কৌশল আবারও চালু হয়েছে। কিন্তু মানুষ আর এসব সহ্য করবে না। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে একদিকে স্যাংশন দিচ্ছে গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্রগুলো। অপরদিকে তারা অন্যায়-অবিচার অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনকে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে রাতারাতি বদলির মাধ্যমে পাল্টিয়ে ফেলা হচ্ছে ডিসি এবং এসপিদের। নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্বস্ত লোকদের দিয়ে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার অন্যায়ভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসে আছে। সরকার বড় গলায় কথা বলে তারা নাকি ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র আসে, জনগণ অধিকার ফিরে পায়। তিনি বলেন, দেশবাসী দেখেছে ২০১৪ সালে কীভাবে অনির্বাচিতদের দিয়ে সংসদ নির্বাচিত হয়েছিল। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে কীভাবে হয়। এ আওয়ামী লীগ সরকার আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে রাতারাতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রথা বাতিল করেছে। কারণ আওয়ামী লীগ জানে যে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে কখনোই জয়ী হতে পারবে না, এমনকি ১০টি আসনও পাবে না। তারা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে, যা আগে কোনো সরকার করেনি। এরা দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। এরা গণতন্ত্রবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী। মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এতে শুধু বিএনপি নয়, দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। সংসদে থাকা জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলনও বলেছে, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। বক্তব্যকালে মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি নেতা রফিকুল আলম মজনু, সাইফুল ইসলাম নীরব, শেখ রবিউল আলম রবি, মোনায়েম মুন্না, ইউসুফ বিন জলিল কালু, এস এম জাহাঙ্গীর, মিয়া নূরুদ্দিন অপু, গোলাম মাওলা শাহীন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জয়নাল হোসেনসহ কারাবন্দি সব নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করেন।

ঢাকার প্রবেশপথে মোড়ে মোড়ে তল্লাশি : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে ঢাকা বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হয়েছে। ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশের’ আয়োজন করে বিএনপির এ তিন অঙ্গসংগঠন। তবে সমাবেশে আসার পথে বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশ পথে মোড়ে মোড়ে তল্লাশি করে পুলিশ।

দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে ঢাকামুখী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। সেখানে ২৫ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের যুব ও তরুণ যাত্রীদের তল্লাশি করা হয়। এ ছাড়া কোনো যাত্রীকে সন্দেহ হলে নামিয়ে দেওয়া হয় পথে। বাসে যাত্রীদের ব্যাগ এবং ব্যক্তিগত গাড়ি তল্লাশি করতেও দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশে কোমল মিনি পরিবহনের বাসে ওঠেন কাউছার আহমেদ। তল্লাশির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, দোকানে যাওয়ার জন্য চিটাগাং রোড থেকে গাড়িতে উঠি। মৌচাক আসতেই পুলিশ গাড়ি থামিয়ে সব যাত্রীকে তল্লাশি করেছে। তবে কিছু না পেয়ে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। যাতায়াত পরিবহনের এক যাত্রী জানান, পুরো সড়কেই পুলিশের চেকপোস্ট দেখলাম। চিটাগাং রোড পার হয়ে এখানে আসতে অন্যান্য গাড়ির মতো আমাদের গাড়িও থামিয়ে চেক করা হয়। আমার সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করেছেন তারা। তবে আমাদের গাড়ি থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।

চেকপোস্ট বসানোর কারণ জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান বলেন, তল্লাশি আমাদের রুটিন কাজ। এটি বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়। আমাদের জেলা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছে।

সড়কে যাতায়াত করতে জনগণের যেন কোনো সমস্যা না হয় সেজন্যই পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সড়কে যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য এ চেকপোস্ট। গাড়ি থামিয়ে তল্লাশির বিষয় তিনি বলেন, কাউকে সন্দেহ হলে আমরা তাকে তল্লাশি করছি। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর