রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সেনাবাহিনী কাজের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করেছে জনগণের

প্রতিদিন ডেস্ক

সেনাবাহিনী কাজের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করেছে জনগণের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের আস্থা ও ভরসা সেনাবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে তা অর্জন করেছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সেনা নির্বাচন বোর্ড (প্রথম পর্যায়) ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো সেনাবাহিনীর জন্য আস্থা ও আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আস্থা ও আত্মবিশ্বাস না থাকলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায় না। আজ আমি বলতে পারি আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা ও ভরসা আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী। তারা সবসময় দেশের জনগণের পাশে থাকে এবং যে কোনো দুর্যোগে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সেনাবাহিনীর সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে সর্বত্র তারা কাজ করছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই আমরা নিশ্চিত যে, কাজগুলো গুণগত মান নিশ্চিত করে দ্রুততার সঙ্গেই সম্পন্ন হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন আমাদের সেনাবাহিনী হবে জনগণের সেনাবাহিনী’। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের সেনাবাহিনী হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশ সেনা নির্বাচন বোর্ড-২০২৩-কে নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে পদোন্নতির জন্য যোগ্য ও বিচক্ষণ কর্মকর্তাদের বাছাই করতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনাদের পেশাদার যোগ্যতা বিবেচনা করে এটি করা উচিত। যৌক্তিক এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে তুলনামূলক মূল্যায়ন করা উচিত।’  তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া, অফিসারদের কমান্ড দেওয়ার দক্ষতা বা (বিশেষ পরিস্থিতিতে) দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে কি না-সেদিকে আপনাদের মনোযোগ দিতে হবে।’

পদোন্নতির জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করার জন্য নির্বাচন বোর্ড সততা ও সঠিক বিচারের সঙ্গে পবিত্র দায়িত্ব পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘মাঠের কাজে তাদের অভিজ্ঞতা এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং তাৎক্ষণিকভাবে সরঞ্জামাদি ব্যবহার করার ক্ষমতা বিবেচনা করুন... আমরা চাই আপনি নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের নেতৃত্বের (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে) কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিন।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাসী বলে কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনী যে কোনো দুর্যোগ ও সংকটময় সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সবসময় দেশের মানুষের পাশে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা অনেকেই ১৯৭৫ সালের পরের ইতিহাস জানেন যখন একের পর এক অভ্যুত্থানে অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সৈন্য নিহত হন। অনেকে তাদের প্রিয় ও কাছের মানুষদের খুঁজে পাননি। শুধু আমিই আমার বাবা, মা, ভাই ও আত্মীয়দের হারাইনি, অনেক সেনা পরিবারও তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে পারেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে যখন তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তখন তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন। কারণ অনেক সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

১৯৮১ সালের ৭ জুন আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীতে বিধবাদের কান্না শুনতে চাই না, আমি সন্তানহারা পিতার কান্না শুনতে চাই না। আমি পিতৃহীন এতিম শিশুদের আর্তনাদ শুনতে চাই না। এই হত্যা বন্ধ হোক।’ ওই সময় অনেকের সতর্কতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে কাউকে কথা বলতে হবে। শৃঙ্খলা থাকতে হবে। আমি বারবার (সশস্ত্র বাহিনীতে) রক্ত ?? দেখতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী জনগণের। এটা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সৈন্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীরা যেখানেই কাজ করছে, সেসব দেশ থেকে তারা ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটি মানবিক গুণ রয়েছে। কারণ তারা তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরে গিয়ে মানবিক কাজও করে। সামাজিক কাজে নিয়োজিত হয়, তাই তারা যেখানেই কাজ করে না কেন স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মান ও প্রশংসা পায়।’

প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর সরকার দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাঁর সরকার দেশের শতভাগ বাড়িকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে। সরকারপ্রধান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বলেছেন।

আইএসপিআরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পৌঁছলে নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তাঁকে স্বাগত জানান।

সর্বশেষ খবর