রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজশাহীর এমপিদের নিয়ে মিনুর বক্তব্যে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর এমপিদের নিয়ে মিনুর বক্তব্যে তোলপাড়

রাজশাহীর আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিদের রাজনৈতিক ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোয় রাজশাহীর চার এমপিকে নিয়ে ওই মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। ওই টকশোয় মিনুর সঙ্গে আলোচক ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। মিনুর ওই মন্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে; যা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক ও বর্তমান কিছু নেতা-কর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে রাজশাহীর রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় চলছে।

ওই টকশোয় মিনু বলেন, ‘রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তাকে আমি দেখেছি রাজশাহী মাদরাসা মাঠের স্টেজে কর্নেল ফারুকের পাশে অস্ত্র নিয়ে জনগণের দিকে তাক করা। তিনি এখন আওয়ামী লীগের এমপি। একসময় তিনি মন্ত্রীও (প্রতিমন্ত্রী) ছিলেন। বাগমারার এমপি এনামুলকে জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ কিছুই করতে দেখি নাই। বগুড়ায় যখন পড়াশোনা করত, তখন শিবিরের প্রেসিডেন্ট ছিল। সেও এখন এমপি।’ রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমানকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘...আরে! মনসুর তো আমি মনে করতাম বিএনপি করত। আমাদের মন্ত্রী কবীর ভাইয়ের ড্রয়িংরুমে সব সময় বসে থাকত প্রমোশন আর ট্রান্সফারের জন্য। আমি জেলখানায় ঢুকে দেখি মনসুর জেলখানার ডাক্তার। হাজতিরা অভিশাপ দেয় তাকে। জেলখানায় হাজতির সঙ্গে কী যে অন্যায়-অত্যাচার করেছে সে। এখন দেখি মনসুরও এমপি। আরেকজন হচ্ছে চারঘাটের, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আরে! ও আমার কাছে তদবির করতে এসেছিল বিএনপি থেকে ভোট করার জন্য। আমি বলেছি ব্যবসা করছ। করো গা। এখানে এসো না। তোমরা ব্যবসা করে দেশকে আগিয়ে নাও। তো ও জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেনি। আসলে আওয়ামী লীগ একটা প্রাচীন দল। সে দলে যারা ভালো তারা নাই। এটি খুব খারাপ। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকতে হবে। সে যে দলেই হোক।’

মিনুর এ মন্তব্যের ভিডিও ক্লিপ দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক নেতা-কর্মীরা। আর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরা।

রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক বলেন, ‘আমি ভিডিও ক্লিপটি দেখেছি। উনি (মিনু) কি তাহলে বগুড়া জেলা শিবিরের সভাপতি ছিলেন? তা না হলে আমার কথা বলছেন কেমন করে? তাকে প্রমাণ করতে হবে আমি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘মিনুর মুখের কথা তার নয়। এটি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার কথা। যা তিনি মিনুকে দিয়ে বলিয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করতে তিনি এই নোংরা পথ বেছে নিয়েছেন। তার প্রমাণ, ওই নেতার ঘনিষ্ঠরা এটি প্রচার করছে। বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের এমপিদের নিয়ে বলবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছাত্রলীগ-যুবলীগ সেটি প্রচার করছে-কেন করছে, সবাই বোঝে।’

রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান বলেন, ‘মিজানুর রহমান মিনু গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারেন, এটা সবার জানা। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

রাজশাহী-৬ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি মিথ্যাচারের। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস। আমি তার কাছে গিয়ে এ ধরনের কথা কখনই বলিনি। তিনি মেয়র থাকাকালে ছাত্রদের একটি সংগঠন থেকে আমরা একবার সিটি করপোরেশন এলাকায় ত্রাণ দিয়েছিলাম। তখন আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন ছিলেন। এই মিথ্যাচারে আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধন আছে, যা দলের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। তাদের বলব জঙ্গিবাদের মদদদাতাদের এসব মিথ্যাচার সমর্থন না করতে।’ এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘যা সত্য তাই বলেছি। এসব রাজশাহীবাসী জানে।’ ওই টকশোয় উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘আমাদের এমপিদের বিরুদ্ধে মিনুর বক্তব্য আমার কাছে খুবই বিব্রতকর মনে হয়েছে। তার সেই বক্তব্যের প্রতিবাদ আমি করেছি। আমার বক্তব্য প্রচার না করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা শুধু মিনুর বক্তব্য প্রচার করছে যা দুঃখজনক। প্রচারকারীরা কারও হয়ে কাজ করছে। তারা আওয়ামী লীগের ক্ষতি চায়।’

সর্বশেষ খবর